পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
স্যাকরাপাড়া লেনের অদূরে প্যান্ডেলে তারস্বরে হিন্দি গান চলছিল। বিশ্বকর্মার প্রতিমা চলে এসেছে। রাস্তার উপরে বসে থাকা এক স্বর্ণকার বললেন, এখানকার অলি-গলিতে কারখানাই বেশি। আগে দু’-এক পা ছাড়া ছাড়াই দেখতেন, ঘটা করে বিশ্বকর্মা পুজো হচ্ছে। ঠাকুর আনা থেকে শুরু করে পুজোর আচার—সবই মালিক এবং কর্মীরা একসঙ্গেই করতেন। বাড়ির ছাদে চলত ঘুড়ির লড়াই। চিৎকার-চেঁচামেচিতে ফেটে পড়ত গোটা এলাকা। আবার সন্ধ্যায় পুজো মণ্ডপে চলত গান-বাজনা। সঙ্গে ভোগ রান্নাকে ঘিরে উদ্দীপনা। গত বছর পর্যন্ত এই চিত্রই দেখা গিয়েছে। লড়াই এমন পর্যায়ে হতো যে, বাইরে থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর দক্ষ লোকজনকে ডাকা হতো। কিন্তু এবছর বিপর্যয়ের জেরে ঝাঁপই বন্ধ। গলির ভিতরে সিংহভাগ সোনার গয়নার দোকান, নয়তো গয়না তৈরির কারখানা রয়েছে। সবই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। ঘুড়ি ওড়ানোর মতো লোকও এলাকায় নেই।
ধীরেন ধর সরণীর সেন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিনজন কর্মী ঘুড়ি বানিয়ে চলেছেন। কেউ বানাচ্ছেন একতেল, কেউবা ২৭। মালিক বিশু সেন বললেন, দাদু, বাবা নিমাইচন্দ্র সেনের পর আমি এই দোকান সামলাচ্ছি। প্রায় সত্তর বছরের বেশি হয়ে গেল দোকানের বয়স। দিনে প্রায় ৪০০’র কাছাকাছি ঘুড়ি তৈরি করি। কিন্তু আগে এমন বিপর্যয়ের সম্মুখীন হইনি। গোটা এলাকা শূন্য। যাঁরা ঘুড়ি ওড়ান, তাঁদের একজনও নেই। উদ্বাস্তুদের মতো জীবন কাটাচ্ছেন এখানকার মানুষ। হোটেলে থেকে কি আর ঘুড়ি ওড়ানো যায়? কে কিনবে ঘুড়ি? সুড়ঙ্গে মেট্রো বিপর্যয় এলাকার মানুষের শুধু বাসস্থানই কেড়ে নেয়নি, আমাদের ব্যবসাকেও শেষ করে দিয়েছে। দোকানের সামনেই বসেছিলেন এলাকার তিন মহিলা। তাঁরা বললেন, এই ঘুড়িবাড়িতে তো কিছুই ভিড় দেখতে পেলেন না। বউবাজারের আকাশের মতো দোকানও ফাঁকা। আকাশের বদলে তখন সেনবাবুদের দোকানের দরজায় সুতোয় বাঁধা আদ্দা ও পান্তা ঘুড়ি হাওয়ায় উড়ছে।