কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রবিবারের কুমোরটুলিতে গিয়ে চোখে পড়ল ব্যস্ততার নানা খণ্ডচিত্র। আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের ওড়াউড়ি, মাটিতে রূপ পাচ্ছে শৈল্পিক উৎকর্ষের মণ্ডপ। আর বাজারে কেনাকাটার থিকথিকে ভিড়। এমন সময়ে কুমোরটুলির শিল্পীদের দম ফেলার ফুরসৎ নেই। এবার বিশ্বকর্মার মূর্তি তৈরি হচ্ছে অনেক কম। গণেশ চতুর্থীও চলে গিয়েছে। ফলে সামনে শুধুই দুর্গাপুজো। কাজ করতে করতে কথা বলছিলেন শিল্পী সমীর পাল। তিনি বলেন, আমরা যে সময়টা প্রতিমা গড়ার কাজ জোরকদমে শুরু করি, এ বছর সেই সময়টা বৃষ্টি হয়নি একেবারে। কিন্তু সেই সময় অনেক কারিগর গণেশ প্রতিমা বানাতে বাইরের রাজ্যে ছিলেন। তাঁরা বেশ কিছুদিন চলে এলেও গত সপ্তাহে বৃষ্টির জন্য কাজ তেমন করা যায়নি। তাই এখন চাপ কিছুটা বেড়ে গিয়েছে। সবে প্রতিমার চোখ এঁকে কাঠের সিঁড়ি থেকে নামলেন বিশ্বনাথ পাল। তিনি বলেন, আমার পাঁচটি ঠাকুর বেরিয়ে যাবে মহালয়ার পরের দিনে। এর মধ্যে তিনটি যাবে দূরের জেলায়। কোনওটা পূর্ব মেদিনীপুর, কোনওটা বর্ধমান। ওই কাজটা আগে শেষ করতে হবে। বাকিগুলো অবশ্য কলকাতা ও আশপাশের এলাকাতেই যাবে। আরেক শিল্পী গণেশ পাল বলেন, এখন প্রতিমা মণ্ডপে পাঠিয়ে আমাদের সেই জায়গাগুলোতে যেতে হয়। প্রতিমার পিছনে চালির কাজ, নিয়ে যাওয়ার সময় কোথাও ভেঙে গেলে সেই কাজ করে আসতে হয়। এসব করার জন্যও দিন দু’য়েক হাতে রাখতে হয়। তাই প্রতিমার কাজ আমরা যত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারব, আর যত তাড়াতাড়ি তা মণ্ডপে নিয়ে যাওয়া হবে, ততই সুবিধে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পুজো কমিটির কর্তা থেকে শুরু করে অতি উৎসাহী নবাগত সদস্যরা কুমোরটুলির স্টুডিওতে ঢুঁ মারা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁরা এসে দেখে যাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিমা তৈরির কাজ ঠিকঠাক এগচ্ছে কি না। টুকটাক পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন শিল্পীকে। মোবাইল ফোন থেকে ছবি দেখিয়ে শিল্পীকে বোঝাচ্ছেন, তাদের ঠিক কেমন প্রতিমা দরকার।
এদিকে, হাজারো শখের আলোকচিত্রীর ভিড় সামাল দিতেও শিল্পীদের রীতিমতো জেরবার হতে হচ্ছে। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসবে, এই ভিড় তত বাড়বে। মাঝেমাঝেই ছোটখাট গোলমাল, তর্কবিতর্ক বেধে যাচ্ছে ছবি শিকারিদের সঙ্গে শিল্পীদের। কুমোরটুলির শিল্পীদের অন্যতম সংগঠনের কর্তা রঞ্জিত সরকার বলেন, যাঁরা ছবি তুলতে আসছেন, অনেকেই অনুমতি না নিয়ে একেবারে স্টুডিওর ভিতরে ঢুকে যাচ্ছেন। তাঁদের অসাবধানতায় মাটির প্রতিমা কখনও সামান্য ভেঙে যাচ্ছে। আবার প্রতিমার ছবি না তুলে কেউ কেউ শিল্পীদের ঘরদোর, তাঁদের ঘুম, খাওয়াদাওয়ার ছবি তুলে ফেলছেন। এতে সবাই খুব বিরক্ত বোধ করছে। আমরা তাই মাইকে ঘোষণা করে বলে দিচ্ছি, এমনটা না করতে।
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীপাড়ার গা ঘেঁসেই কুমোরটুলি সার্বজনীন, কিছুটা দূরে কুমোরটুলি পার্কের নামকার পুজোর আয়োজন। সেখানেও প্রস্তুতি তুঙ্গে। আকাশের শারদীয়া সাজসজ্জা, বাতাসে আগমনী সুর আর মানুষের এই উৎসবমুখরতার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত যেন কুমোরটুলির এই ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে এই আবহ জানান দিচ্ছে, আর তো মাত্র ক’দিন বাকি!