পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় আড়াই দশক ধরে দেবদাসবাবু নাকতলার দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংস রোডের বাসিন্দা। তিনি হৃদরোগী ছিলেন। তাঁর স্ত্রী ভারতী চট্টেপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত, শয্যাশায়ী। মাসখানেক আগে নিউটাউনের ক্যান্সার হাসপাতাল থেকে তিনি ছাড়া পেয়ে বাড়িতে এলেও বিছানা থেকে উঠতে পারেননি। দেবদাসবাবুর পড়শি তথা জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন বিজ্ঞানী কমল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, আমরা ২৪ বছর এক আবাসনে থেকেছি। সদ্য উল্টোদিকের আবাসনে চলে এসেছি। শনিবার সকালেও আমি দেবদাসবাবুর সঙ্গে কথা বলি। ওঁর এবং ওঁর স্ত্রীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখনই জানতে পারি, গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শরীর ভালো যাচ্ছে না।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার বিকেলে দেবদাসবাবু মৃদু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁর একমাত্র ছেলে দেবাঞ্জন চট্টোপাধ্যায় জানতে পেরে কর্মস্থল থেকে চলে আসেন। সন্ধ্যায় গড়িয়ায় তাঁদের পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে বাবাকে দেখাতে নিয়ে যান। দেবাঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, চিকিৎসক তাঁকে বলেছিলেন তাঁর বাবাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে। তবে সাময়িক পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাঁকে দু’টি ওষুধের নাম লিখে দেন। সেই ওষুধ কিনতেই দেবাঞ্জনবাবু তাঁর বাবাকে নিয়ে গড়িয়া মোড়ের একটি ওষুধের দোকানে আসেন। দেবাঞ্জনবাবু বলেন, ওষুধের দোকানে পৌঁছতেই বাবা আমাকে বলে, খুব জোরে প্রস্রাব পেয়েছে। আমি বাবাকে বলি, একটু দাঁড়িয়ে থাকতে। আমি ওষুধ কিনে দ্রুত তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাবা বেগ চেপে রাখতে পারেনি। বারবার আমায় বলায় আমি সম্মতি দিই। পুলিস জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধ পাঁচ নম্বর বাস ডিপোর সংলগ্ন অংশে গিয়ে প্রস্রাব করছিলেন। সেই সময় পাঁচ নম্বর ডিপো থেকে একটি বাস রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক রোডে বেরচ্ছিল। বাসের ধাক্কা লাগে বৃদ্ধের। বাসটির গতি অনেকটা বেশি থাকায় ধাক্কা খেয়ে বৃদ্ধ পড়ে যান। বাসের পিছনের চাকা তাঁর কোমরের উপর দিয়ে চলে যায়। চিৎকার শুনে দেবাঞ্জনবাবু ছুটে এসে দেখেন, চাকার তলায় তাঁর বাবা পিষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছেন। রাস্তায় টহলদারি পুলিসকর্মীরা জখম বৃদ্ধকে গাঙ্গুলিবাগান সংলগ্ন হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রায় তিন ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালানোর পর রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় ওই বৃদ্ধকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভারী চাকা তাঁর উপরে উঠে যাওয়ায় বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না। রবিবারও দেবাঞ্জনবাবুর গলায় কান্নার সুর। চোখের সামনে বাবাকে এভাবে শেষ হয়ে যেতে দেখার যন্ত্রণা নিয়ে তিনি বললেন, কেন বাবাকে একা ছাড়লাম! কেন বাবার সঙ্গে একটু গেলাম না! আমি সঙ্গে থাকলে, বাবার এভাবে মৃত্যু হতো না।