বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
কলকাতা পুলিসের একটি সূত্র বলছে, শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পর অ্যাব ক্যাব ধরে পালানোই নয়, শনিবার বিমানবন্দর দিয়ে শহর ছাড়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন অভিযুক্ত আরসালান। তার আগেই অবশ্য বাইপাস থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। এদিন সকালে (তখনও পর্যন্ত গাড়ির চালক বা মালিক সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পুলিসের কাছে আসেনি) ঘটনাস্থলের অদূরের কয়েকটি সিসিটিভি’র ফুটেজ সংগ্রহ করে শেক্সপিয়র থানা। সেখানেই শুক্রবার রাতের ঘটনা এবং তারপরে অভিযুক্তের অ্যাপ ক্যাব বুক করে চলে যাওয়ার গোটা চিত্র ধরা পড়ে। এরপরে গাড়ির তথ্য হাতে পাওয়ার পরই পুলিসের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়, অভিযুক্ত গাড়ির চালক কলকাতার একটি নামী রেস্তরাঁর মালিকের ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বেকবাগানের ফ্ল্যাটে পৌঁছে যায় পুলিস। যদিও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তারপরে পুলিস অভিযুক্ত গাড়ির চালকের বাবা তথা কলকাতার নামী রেস্তরাঁর মালিকের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। যদিও তিনি পুলিসকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ছেলের সঙ্গে শুক্রবার রাত থেকেই কোনও যোগাযোগ হয়নি।
এরপরেই পুলিস অভিযুক্ত যুবকের মোবাইল ট্র্যাক করতে থাকে। পুলিস সূত্রের দাবি, সেটি বারবার অফ-অন হচ্ছিল। তাই সেটির অবস্থান সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। পরে পুলিস জানতে পারে, ওই নম্বর থেকে একটি অ্যাপ ক্যাব বুক করা হয়েছে এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য। এরপরেই সেটিকে ট্র্যাক করে পুলিস ধরে ফেলে অভিযুক্তকে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মাত্র একমাস আগে বিদেশ থেকে ম্যানেজমেন্ট পড়াশোনা শেষ করে তিনি কলকাতায় ফিরেছেন। শুক্রবার রাতে একটি পার্টি থেকে বেকবাগানের ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন। সেই সময়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে। তারপরে তিনি অ্যাপ ক্যাব বুক করে বাইপাস সংলগ্ন একটি বহুতলের একটি ফ্ল্যাটে চলে যান।
তবে আতঙ্ক থেকে বেরতে পারছেন না ঘটনাস্থলে থাকা জিয়াদ। তিনি ফারহানা ইসলাম তানিয়ার তুতো ভাই। শুক্রবার রাতে কাজি মহম্মদ মইনুল আলম এবং তানিয়ার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বাঁচলেও জখম হন। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, রেস্তরাঁতে খাওয়ার পর আমরা হোটেলে ফিরছিলাম। খুব জোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ট্রাফিক কিয়স্কের আচ্ছাদনের তলায় দাঁড়িয়েছিলাম। আচমকাই খুব জোরে আওয়াজ এবং তারপরই ধাক্কা। এরপর কিছুই মনে ছিল না। তিনি এও বললেন, গত ১৪ তারিখ আমরা ভারতে আসি। উঠেছিলাম মির্জা গালিব স্ট্রিটের একটি হোটেলে। কাজি মহম্মদ মইনুল আলম কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চোখ দেখাতে আসেন। এবারেও রুটিন চেকআপের জন্য এসেছিলেন। সঙ্গে আমিও এসেছিলাম।
এদিকে, ফরেনসিক পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জাগুয়ার এবং মার্সেডিজ দুটি গাড়িই অত্যাধিক গতিতে ছিল। এই গতির কারণে দুই চালকই গাড়ি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। উল্লেখ্য, অপর গাড়িটিতেও যে দম্পতি ছিলেন তাঁরা একটি পার্টি থেকে ফিরছিলেন বলে পুলিসকে জানিয়েছেন। তাঁদের এবং অভিযুক্তর শারীরিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আরও জানা গিয়েছে, মার্সেডিজ গাড়িতে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা একটি তেল কোম্পানির উচ্চপদে রয়েছেন। অন্যদিকে, ঘটনার সময় ওই ক্রসিংয়ের সিগন্যাল কী অবস্থায় ছিল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিস জানিয়েছে। কারণ কোন গাড়িটি সিগন্যাল মেনে যাচ্ছিল, আর কোনটি সিগন্যাল ব্রেক করে যাচ্ছিল— তা এখনও স্পষ্ট হয়নি বলে পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে।