পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
এফ বি নিউ দেবীবড়গভীরা(২)ট্রলারের অভিজ্ঞ মাঝি গোবিন্দ দাস। কাকদ্বীপের মাইতির চকের বাসিন্দা তিনি। ত্রিশ বছর ধরে সমুদ্রে ট্রলার চালানো থেকে জাল ফেলে মাছ ধরার কাজ করে আসছেন। কিন্তু এবারের মতো মৃত্যুর মুখে পড়ার অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। বললেন, বছরের মধ্যে মাত্র তিনমাস ডাঙায় থাকি। বাকিটা সময় গভীর সমুদ্রে জলের মধ্যে জীবন কাটে। স্বাভাবিকভাবে ভয়ডর আমাদের কম। এবার প্রথম কিন্তু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। গত ৩ জুলাই কাকদ্বীপ থেকে ইলিশ ধরার জন্য রওনা হই। বেশ মনে পড়ছে ৬ জুলাই সকাল সাড়ে দশটা হবে। সবে জাল গুটিয়ে সঙ্গীরা মাছ ঝাড়াই বাছাই করে রেখে চা খাওয়ার তোড়জোড় করছিল। আচমকা দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক থেকে প্রবল বেগে দমকা বাতাস উঠল। পাশাপাশি আরও চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মতো ট্রলার ছিল। সবগুলি ঢেউয়ের মধ্যে পড়ে দুলছে। দ্রুত ট্রলারকে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করলাম। কিন্তু বাতাসের চাপ এতটাই পিছনে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল। এরমধ্যে জলের মধ্যে ভয়ঙ্কর রোলিং শুরু হল। সাত থেকে আট উঁচু ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল ঢেকের উপর। ডেকের উপর জল উঠে জমতে শুরু করেছে। হাঁটু সমান জল এখন। সঙ্গীরা আতঙ্কে এ ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে। কিছুটা তফাতে নিয়ে জলের ভিতর নোঙড় ফেললাম। কিছু সময় পর জলের ঢেউ ও বাতাসের চাপে সেই নোঙড় খুলে দিল। পরিস্থিতি এমন হল, ট্রলার ডোবার মুখে। কিছুটা দূরে একটি ট্রলার দেখলাম ডুবে গেল। চিৎকার চারপাশে। তাতে আরও ভয় পেয়ে গেলাম। হাওয়া আর জলের রোলিংয়ের চাপে ট্রলার চালাতে পারছিলাম না। বুঝলাম দক্ষিণের দিকে এগিয়ে লাভ হবে না। মুখ ঘুরিয়ে নিতে আরও জল ঢুকল। সঙ্গীদের বললাম ভাই, লাইফ জ্যাকেট নাও। বাঁচার আশা আর নেই। পূর্ব দিক ধরে এগতে হাওয়াতে তর তর করে সামনে ঠেলে দিল। ৭ জুলাই এভাবে যুদ্ধ করতে করতে আমাদের সঙ্গে আরও ত্রিশটি ট্রলার তারাও একইভাবে এগতে লাগল। ৮ জুলাই এইভাবে টাল খেতে খেতে বাংলাদেশ জল সীমানার মধ্যে ট্রলার ঢুকে গেল। সেখানকার দু’টি চরাতে ট্রলার সব নোঙড় করা হল। ওইদিন বাংলাদেশ উপকূল রক্ষীবাহিনীর কাছে আমাদের সকলে আত্মসমর্পণ করলাম। একই অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ থেকে ফেরা আরও ৫১৫ জন মৎস্যজীবীর। এদিন কাকদ্বীপ ফিরে প্রত্যেকেই বাংলাদেশে দশদিন কাটানোর সুখকর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন মৎস্যজীবীদের চাল, ডাল, আলু পেঁয়াজ থেকে জ্বালানির কাঠ যোগান দিয়ে গিয়েছে। ট্রলারে চিকিৎসক পাঠিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছে। তাঁদের যাতে কোনও বিপদ না হয় সেজন্য ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিয়েছেন। সুন্দরবন বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর লাগাতার চেষ্টার ফলে এতজন মৎস্যজীবীকে ট্রলারসহ ফেরানো গিয়েছে।