বিএনএ, বারাকপুর: ফের অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল ভাটপাড়া। মঙ্গলবার রাতে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমাতে পুলিসের এক এএসআই জখম হলেন। তাঁর বাঁহাতের কনুইয়ের উপরে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। জখম পুলিস অফিসারকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে, ওই রাতেই কলাবাগান পাড়ায় বিজেপির মহিলা কাউন্সিলার ও তাঁর স্বামীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিসের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে ঘোষপাড়া রোডের কাছারিপাড়া মোড়ে অবরোধে নামেন এলাকার বাসিন্দারা। পরে পুলিস অবরোধ তুলে দেয়। যদিও পুলিস বিজেপি কাউন্সিলার ও তাঁর স্বামীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মঙ্গলবার রাতের অশান্তিতে পুলিসসহ জখমের সংখ্যা চার।
গত শনিবার রাত থে঩কেই দুই দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভাটপাড়া। সোমবার ব্যাপক বোমাবাজির সঙ্গে ভাটপাড়া পুরসভা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেদিন থেকেই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। মঙ্গলবার পুরসভার হাসপাতালে তালা ঝুলেছে। তারপরও গভীর রাতে ফের বোমাবাজি শুরু হয় কাঁকিনাড়ার বারুইপাড়া ও পঞ্চাননতলা এলাকায়। বারুইপাড়াতে কর্তব্যরত ছিলেন পুলিসের এএসআই দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর সামনে আচমকা একটি বোমা এসে পড়ে। বোমার স্প্লিন্টার তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের উপরে লাগে। জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে বারাকপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিস সূত্রের খবর, তিনি বহরমপুর থেকে ভাটপাড়ায় এসেছিলেন।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই দুষ্কৃতী গোষ্ঠীর মাঝখানে পড়ে বারুইপাড়াতে বোমাবাজিতে জখম হন এক ব্যক্তি। তাঁকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, কাঁকিনাড়ার কলাবাগান এলাকায় বাড়ি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলার গীতারানি যাদবের। কাউন্সিলারের বাড়ির সামনে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বোমা পড়ার শব্দ পেয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসেন কাউন্সিলারের স্বামী সুরিন্দর যাদব। তিনি বেরিয়ে আসতেই পুলিসের সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর। অভিযোগ, পুলিস কাউন্সিলারের স্বামীকে বেধড়ক মারধর করে। মারধরের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচাতে গেলে গীতারানিকেও মারধর করা হয়। রাতেই জখম দুই জনকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কাউন্সিলার ও তাঁর স্বামীকে মারধরের প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৯টা থেকে ঘোষপাড়া রোডের কাছারি মোড়ে অবরোধে নামে স্থানীয় বাসিন্দা। পরে পুলিসের আশ্বাসে অবরোধ উঠে যায়। বিজেপির সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেন, আমাদের দলের কাউন্সিলার ও তাঁর স্বামীকে পুলিস বেধড়ক মারধর করেছে। তবে এদিন যাঁরা অবরোধ করেছিলেন, তাঁরা আমাদের দলের নয়। এলাকার বাসিন্দারা ঘটনার প্রতিবাদে অবরোধে নামেন।
বোমাবাজিতে পুলিসের এএসআই জখম হওয়ার ঘটনায় দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে তরজাও শুরু হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে। বিজেপির এমপি অর্জুন সিং বলেন, তৃণমূলীরাই বোমাবাজি করেছে। ওদের বোমাতেই জখম হয়েছে পুলিস। আর আমাদের যে কাউন্সিলার পুলিসের মারে জখম হয়েছেন, তিনি পুলিসের বিরুদ্ধে আদালতে যাচ্ছেন। ভাটপাড়ায় পুলিস রাজ্য সরকারের হয়ে দালালি করছে। ভাটপাড়ার মানুষ তা মেনে নেবে না। তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ভাটপাড়ায় বাইরে থেকে সমাজবিরোধীদের এনে অশান্তি সৃষ্টি করছে বিজেপি। ওদের ছোঁড়া বোমাতেই পুলিসকর্মী জখম হয়েছেন। অর্জুনের উচিত এলাকায় শান্তি ফেরানো। শান্তি না ফিরিয়ে অশান্তি বাধাচ্ছে, এটা অর্জুন ঠিক করছে না।
তবে এদিন বুধবার নতুন করে গণ্ডগোলের খবর নেই। বোমাবাজি হয়নি। তবে উত্তেজনা ছিল গোটা ভাটপাড়া জুড়ে। বারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি অজয়কুমার ঠাকুর বলেন, বোমাবাজিতে একজন এসএসআই জখম হয়েছেন। কলাবাগানে কাউন্সিলারকে পুলিস মারধর করেছে বলে জানা নেই। এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।