কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
এদিন যাঁরা এনআরএসে এলেন, রোগীর চাপ কম থাকায় তাঁরা নির্বিঘ্নে ডাক্তার দেখিয়ে যেতে পেরেছেন। হাসপাতালের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মী বলেন, সাধারণত বড়সড় বন্ধের দিন ছাড়া এতটা ফাঁকা থাকে না। তিনি নিয়মিত যেখানে চা-সিগারেট খান, সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন, হাসপাতালে ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর দোকানদার সেই যে দেশের বাড়িতে গিয়েছেন, এখনও ফেরেননি। অন্যান্য দোকানদাররাও কার্যত মাছি তাড়াচ্ছেন। তবে কিছু কিছু রোগী ওপিডিতে আসছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই তাঁরা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর জন্য সকাল থেকে এসে ওপিডির বাইরে অপেক্ষা করছেন। তবে, লম্বা লাইন না থাকায় দ্রুত সব মিটে যাচ্ছে। বসিরহাটের আসিয়া বিবি এসেছিলেন আত্মীয়ের সঙ্গে। রক্ত পরীক্ষা করানোর পর ধর্মঘট শুরু হয়ে যায়। তাই রিপোর্ট নিতে পারছিলেন না। ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর পেয়েই তিনি রিপোর্ট নিতে আসেন। হাসিমুখে জানান, রিপোর্ট ভালোই আছে।
তবে, ভাগ্য ততটা ভালো নয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার একটি পরিবারের। বাড়ির অন্যতম সদস্য সঞ্জয় দাসের স্ট্রোক হয়েছিল। হাসপাতালে আনতেই তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁর কিশোর ছেলে বার বার অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। পেটেও অসহ্য যন্ত্রণা। তাঁকেও ইমার্জেন্সিতে ভর্তির তোড়জোড় শুরু হয়। হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক পুলিস না থাকলেও মেন গেট সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিসের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। হাসপাতালের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীরাও রীতিমতো সজাগ। ইউএনবি বিল্ডিংয়ে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন এক রোগীর আত্মীয়। কিন্তু তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় কড়া ভাষায় তাঁকে ধমকে ফেরত পাঠিয়ে দেন নিরাপত্তাকর্মীরা। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে নাগাড়ে বলে যাওয়া হচ্ছে, রোগীর আত্মীয়দের কী করণীয়, কী নয়। সমস্যায় পড়লে রোগী সহায়তা কেন্দ্রেও যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কোলের শিশুদের ডিসচার্জ করে নিয়ে যাচ্ছেন মা। আবার কেউ কয়েকদিনের শিশুকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে ঢুকছেন, এমন দৃশ্যও চোখে পড়ল। এনআরএসের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে, জানা গিয়েছে, এদিন আউটডোরে ২০৪৬ জন রোগী ডাক্তার দেখিয়েছেন। অন্যান্য দিনে সংখ্যাটা হয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার। জরুরি বিভাগে যেখানে ৩৫০ জনেরও বেশি রোগী ভর্তি হন, এদিন সেখানে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১৩৭ জন।
এসএসকেএমেও রোগীর ভিড় অবিশ্বাস্য কম। তুলনায় পুলিস মোতায়েন রয়েছে প্রচুর। চিকিৎসকদেরও কিছুটা চাপমুক্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছে এদিন। ইমার্জেন্সিতেও রোগী আসছে। কিন্তু ওপিডি অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ ফাঁকা। কয়েকদিন আগেই বহরমপুর থেকে রেফার করে দিয়েছিল কান্দির এক বাসিন্দাকে। ধর্মঘট উঠতেই এদিন তাঁর স্ত্রী এসএসকেএমে নিয়ে এসেছেন তাঁকে। অনেকেই এদিন কৌতূহলবশত উঁকি মেরে দেখে গেলেন, কীভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে এসএসকেএম।
হাসপাতালের বাইরের ফুটপাতে খাবারের দোকানিদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না অন্যান্য দিন। তাঁরাও এদিন সাধারণ পথচারীদের দেখেও হাঁকডাক করছিলেন। কিন্তু মাছের ভাজা মুড়ো, পুরি-সব্জি, গরম ভাত অবিক্রিত অবস্থাতেই পড়ে ছিল। ওষুধের দালালরাও হাসপাতালের বাইরের ফুটপাতে কাজে লেগে গিয়েছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এরকমই এক দালাল জানালেন, এদিন ব্যবসা প্রায় কিছুই হয়নি। আশা করছেন, কয়েকদিনের মধ্যে তাঁদের আয় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে।