নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: দক্ষিণ শহরতলির ব্যস্ততম গড়িয়া সি-ফাইভ বাস টার্মিনাসে কুড়িজনের সশস্ত্র হামলাবাজ লাঠি, লোহার রড নিয়ে বেপরোয়া তাণ্ডব চালাল। শনিবার গভীর রাতে মাথায় ফেট্টি ও মুখে কাপড় বেঁধে তারা টার্মিনাসে দাঁড়ানো গড়িয়া পাইকপাড়া, গড়িয়া বাগবাজার, হাওড়া-গড়িয়া, ১১৬, ১২৪ নম্বর রুটের নাকতলা-হাওড়া, গড়িয়া বিবাদি বাগ মিনিসহ ৩২টি বেসরকারি বাসে ভাঙচুর চালায়। বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা কন্টাক্টরদের তুলে তাদের কাছ থেকে টাকার ব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। বাধা দিলে মারধর করা হয়। তাতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি লুট হয়েছে বলে অভিযোগ। এত বড় ঘটনা হলেও রবিবার রাত পর্যন্ত ওই হামলা কেন এবং কারা এর পিছনে সে ব্যাপারে কোনও কিনারা করতে পারেনি পুলিস।
এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার সকাল থেকে ওই সমস্ত রুটের বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাসের কন্টাক্টর ও চালকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান। তার জেরে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। বিশেষ করে উত্তর কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণের যাতায়াতকারী বাগবাজার, পাইকপাড়া রুটের যাত্রীদের বিভিন্ন জায়গাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি হাওড়া, বিবাদি বাগ রুটের যাত্রীরাও সমস্যায় পড়েন। পরিস্থিতি সামাল দিতে ময়দানে নামেন রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পাপিয়া হালদার। তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বাস চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। এভাবে বাস বন্ধ করে দিলে প্রচুর যাত্রী অসুবিধায় পড়বেন বলে জানান। পরে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিস কর্তাদের ফোন করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। পরে বাস মালিকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়। দুপুরের পর বরফ গলে। মালিকপক্ষ জানিয়ে দেয়, যে সমস্ত বাস ভাঙা হয়েছে তা বের করা যাবে না। পরিবর্তে ভাঙা নয়, সেই বাস রাস্তায় বেরবে। এরপর দুপুর দেড়টার পর থেকে ওই সমস্ত রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। যদিও সংখ্যায় ছিল অনেক কম। তাতে রবিবার ছুটির দিন হলেও মানুষের দুর্ভোগ কিন্তু কমেনি।
এদিন গড়িয়া সি-ফাইভ বাস টার্মিনাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেল শনিবার হামলার ঘটনাটি নিয়ে সেখানকার মানুষের মুখে মুখে চর্চা হচ্ছে। প্রচুর মানুষের ভিড়। তাঁদের মধ্যে অনেকেই যাত্রী। প্রত্যেকেই জানতে চাইছেন, কেন এবং কারা হামলা চালাল? হামলাকারীরা কেনই বা মুখে কাপড় বেঁধে এসেছিল? গড়িয়া-বাগবাজার, পাইকপাড়া রুটের বেশ কয়েকজন চালকের সঙ্গে কথা বলে এর রহস্য জানা গেল। তাঁদের মুখ থেকে জানা গেল, প্রতিদিন গড়িয়া বাস টার্মিনাসের বেসরকারি সমস্ত বাস পিছু মোটা টাকা আদায় করা হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী একটি অংশের মদতে অনেকদিন ধরে এটা চলছিল। শুধু তাই নয়, টার্মিনাসের ভিতর ঘুমটি বসিয়ে টাকা তোলা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দোকানদারদের কাছ থেকে নেওয়া হয় মাসোহারা। বেসরকারি বাসের ক্ষেত্রে নাকতলা-হাওড়া রুটের মিনি দাবিমতো টাকা দিলেও সম্প্রতি পাইকপাড়া, বাগবাজার রুটের বাস মালিকরা আর দিচ্ছিলেন না। তারই বদলা হিসেবে শনিবার রাতে ওই হামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আগে গরিব কয়েকজন যুবক এখানে হোটেল করেছিলেন। শাসকদলের ইন্ধনে সেই সব হোটেল তুলে দিয়ে তৃণমূলের এক নেতার অনুগত একজনকে দিয়ে হোটেল খোলা হয়। টার্মিনাসের সমস্ত বাসের চালক ও কর্মীদের সেই হোটেলে খেতে হবে বলে চাপ দেওয়া হয়েছিল। ভয়ে অনেকে খেলেও, সকলে সেই হোটেলে যেতেন না। এ নিয়ে রাগ তৈরি হয়েছিল। যদিও ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পাপিয়া হালদার বলেন, ওখানে বাস সংগঠনের ইউনিয়ন রয়েছে। তারা কোনও চাঁদা তোলে কি না, জানা নেই। ওটা দেখিও না। তবে আমার কাছে টাকা তোলা নিয়ে কেউ কোনওদিন অভিযোগ করেনি।