গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
অর্চনাদেবী কেবল একা নন। এনআরএস হাসপাতালে ডাক্তারদের কাজ ফেলে আন্দোলনের জেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সেখানে ভর্তি থাকা রোগীদের বহু আত্মীয়-পরিজনই। কেউ কেউ অর্চনাদেবীদের মতোই রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছেন বিকল্পের সন্ধানে। অনেকেই আবার রোগীদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন হাসপাতাল চত্বরে বসে। জরুরি বিভাগের পাশেই ঝিলপাড়ে হতাশ মুখে বসেছিলেন বেবি কর্মকার, রতন কর্মকাররা। কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা বেবিদেবীর কথায়, দুর্ঘটনায় জখম স্বামীকে অনেক আশা নিয়ে এখানে ভর্তি করেছিলাম। ডাক্তাররা এখন রোগী দেখছেন না। আমরা রোগীকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। বহির্বিভাগের পাশে চাদর বিছিয়ে বসেছিলেন মনুয়া বিবি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রান্তিক জায়গার এই বাসিন্দা বললেন, এখানে রোগীকে ফেলে রেখে আর লাভ নেই দেখছি। কতজনকে হাতে-পায়ে ধরলাম। স্বামীর পেটে প্রবল যন্ত্রণা। কমছেই না। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে কথা বলতে গিয়েছেন। ছাপিয়ে নিয়ে গিয়ে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করব। জরুরি বিভাগের পাশে একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বসেছিলেন মুর্শিদাবাদের আলাউদ্দিন শেখ। বললেন, ছাদ থেকে পড়ে মেয়ের কোমর ভেঙে গিয়েছে। এই সময়েই অপারেশনের ‘ডেট’ ছিল। সেই অপারেশন কবে হবে জানি না। কিছুটা স্বর নামিয়ে বললেন, বলুন তো, আমরা তো মারধর করিনি। তাহলে আমাদের এতটা অসহায় করে দেওয়া হচ্ছে কেন? লিভারের সমস্যায় এনআরএসে ভর্তি রয়েছেন ডায়মন্ডহারবারের সজল বাজখাঁর মা। ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, যা হচ্ছে ভয় লাগছে। মাকে ডাক্তাররা দেখছেন তো?
এদিন গোটা দিনই ভর্তি থাকা রোগীদের পরিজনরা যেমন আতঙ্কে অন্য হাসপাতালের সন্ধান করেছেন, তেমনই বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীরা প্রবল অনিশ্চয়তায় সময় গুনেছেন। উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জ থেকে ভাইকে ডাক্তার দেখাতে এনেছেন কাননদেব সিংহ। বহির্বিভাগের পাশে চাদর বিছিয়ে বসে ভাইয়ের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে অসহায় মুখে বললনে, মঙ্গলবারই এসেছি। আর তারপর থেকে ঘুরেই চলেছি। ভাইয়ের রক্তাপ্লতা ধরা পড়েছে। শিলিগুড়ির হাসপাতাল থেকে কলকাতায় নিয়ে যেতে বলেছিল। কিন্তু, বহির্বিভাগ তো বন্ধ। ডাক্তারও নেই। এবার আমরা যাব কোথায়? একই অসহায়তা ধরা পড়েছে ঘুঁটিয়ারি শরিফের গোলাম হোসেন মোল্লার কথাতেও।
ঝিলপাড়েই কথা হচ্ছিল মুর্শিদাবাদের টুনু বিবির সঙ্গে। তিনি বলেন, এর আগেই মা একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ফের বুকে ব্যথা শুরু হওয়ায় মাকে নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে মাকে ভর্তি করিয়ে দেব। এখন আমরা কোথায় যাব?
ঠিক জরুরি বিভাগের সামনেই শামিয়ানা খাটিয়ে অবস্থানে বসেছিলেন ডাক্তাররা। চলছে বক্তৃতাও। বক্তারা বলছেন, চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনায় ‘জাস্টিস’ চাই। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন ভর্তি থাকা রোগীদের কয়েকজন আত্মীয়। বলেন, চিকিৎসকদের উপরে হামলা নিন্দনীয়। অভিযুক্তদের শাস্তি আমরাও চাই। কিন্তু যেভাবে আমাদের অসহায় করে দেওয়া হয়েছে, তার ন্যায় বিচার করবে কে?