বিএনএ, বারাকপুর ও গলসি: রাজনীতির খুনে ফের রক্তাক্ত রাজ্য। সোমবার রাতে বারাকপুর মহকুমার ভাটপাড়ায় দু’জন ও বর্ধমানের গলসিতে এক তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছেন। সন্দেশখালির রক্ত শুকিয়ে ওঠার আগেই ফের রাজনৈতিক হিংসায় একইদিনে ফের তিনজন বলি হওয়ায় নতুন করে উত্তাপ মাথাচাড়া দিয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁচরাপাড়ায় সফরের আগেই ভাটপাড়ার বারুইপাড়া এলাকায় দুই তৃণমূল সমর্থককে বোমা মেরে নৃশংসভাবে খুন করার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বোমার আঘাতে আরও তিনজন জখম হয়েছেন। একজনের চোখ উড়ে গিয়েছে। পরিবারের তরফে জগদ্দল থানায় যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাতে এই খুনের ষড়যন্ত্রে বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং এবং ভাটপাড়া পুরসভার বিজেপির চেয়ারম্যান সৌরভ সিং রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গলসি-২ ব্লকের সাটিনন্দীতে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষে শাসক দলের এক কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় আরও তিনজন তৃণমূল কর্মী জখম হয়েছেন। নিহত তৃণমূল কর্মীর নাম জয়দেব রায় (৪৮)। তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। ডান পা, থুতনিতে কোপ মারা হয়। পা ভেঙে দেওয়া হয়। বাঁচাতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়ান আরও কয়েকজন তৃণমূল কর্মী। আহত অনিল মালিক, মোহন পুইলে ও বামাপদ মালিক বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বর্ধমানে এসে নিহত দলীয় কর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি তিনি সাটিনন্দী গ্রামে নিহত কর্মীর বাড়িতেও যান। ছিলেন আরেক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু প্রমুখ।
ভাটপাড়ায় মৃত তৃণমূল সমর্থকদের নাম মহম্মদ হালিম (৬২) ও মহম্মদ মোক্তার (৬০)। পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে মহম্মদ হালিম, প্রতিবেশী মহম্মদ মোক্তার, হালিমসাহেবের ছেলে পারভেজ ও তারভেজ এবং স্ত্রী রুবি পারভিন বাড়ির সামনে বসেছিলেন। অভিযোগ, বিজেপির লোকজন আচমকা পিছনের গলি দিয়ে এসে হালিমসাহেবকে লক্ষ্য করে প্রথমে বোমা মারে। বোমার আঘাতে তাঁর মাথা ফেটে যায়। তারপর আবার তারা বোমা ছোঁড়ে। তাতে মহম্মদ মোক্তার, পারভেজ ও তারভেজ এবং রুবি পারভিন জখম হন। ঘটনাস্থলেই মহম্মদ হালিমের মৃত্যু হয়। রাতে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে মোক্তারকে ভর্তি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে তিনি মারা যান। হালিমসাহেবের ছেলে পারভেজের একটি চোখ উড়ে গিয়েছে। আর এক ছেলে তারভেজ এবং স্ত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, পূর্ণেন্দু বসু, বিধায়ক নির্মল ঘোষ, তাপস রায়, মদন মিত্র সহ তৃণমূল নেতৃত্ব বারুইপাড়ায় যায়। মৃত দুই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তাঁরা দেখা করেন। এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুই পরিবারের দু’জনকে চাকরি দেওয়ারও ব্যবস্থা করবেন। বিজেপি পরিকল্পিতভাবে এই খুন করেছে। অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, বিজেপির কোনও বিষয় নেই। আমি যতদূর শুনেছি, ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।
 গলসিতে খুন হওয়া তৃণমূল কর্মী জয়দেব রায়ের শোকগ্রস্ত পরিবার।- নিজস্ব চিত্র