গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ভোট বাড়িয়েও হেরে যাওয়ার কারণ অন্য দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম ও কংগ্রেসের ভোট হ্রাস। গতবার এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী রূপা বাগচি ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৫৪৯টি ভোট পেয়েছিলেন। সেখানে এবার সিপিএমের কনীনিকা বোস (ঘোষ) পেয়েছেন মাত্র ৭১ হাজার ৮০টি ভোট। গতবার কলকাতা উত্তর আসনে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৮৩টি ভোট পেয়েছিলেন সোমেন মিত্র। সেখানে এবার কংগ্রেস প্রার্থী শাহিদ ইমাম পেয়েছেন মাত্র ২৬ হাজার ৯৩টি ভোট। গোটা রাজ্যের প্রবণতা বজায় রেখে এই লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস ও সিপিএমের ব্যাপক শক্তিক্ষয় হয়েছে। প্রদত্ত ভোটের ৭.৪৮ শতাংশ পেয়েছে সিপিএম। কংগ্রেস পেয়েছে ২.৭৪ শতাংশ। সিপিএম ও কংগ্রেসের ভোট গিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি-র দিকে।
গতবার ও এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা কাছাকাছি ছিল। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি নির্বাচনেই দশ লক্ষের কাছাকাছি ভোট পড়েছে। কিন্তু কংগ্রেস ও সিপিএমের ভোটই ‘শিফট’ হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি’র বাক্সে। এই ভোটের বেশিরভাগ পেয়েছেন সুদীপবাবু। তাই তাঁর জয়ের ব্যবধানও বেড়েছে।
রাহুলবাবু গত লোকসভা নির্বাচনে ২ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬১টি ভোট পেয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৭৯৬টি ভোট। গতবার মোট ভোটের প্রায় ২৫ শতাংশ তিনি পেয়েছিলেন। এবার পেয়েছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সুদীপবাবুর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩ লক্ষ ৪৩ হাজার ৬৮৭ (৩৫.৪৪ শতাংশ)। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার ৮৯১ (৪৯.৯৬ শতাংশ)।
কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রে প্রায় ২৫ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের। সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত কংগ্রেস এখানে মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। কংগ্রেসের ভোট ব্যাপকভাবে কমেছে। সংখ্যালঘু ভোট যে মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে গিয়েছে, তার একটা বড় প্রমাণ হল, এন্টালি, বেলেঘাটা ও চৌরঙ্গি বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীর বিশাল ভোটে এগিয়ে থাকা। কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে সংখ্যালঘু ভোটারদের বড় অংশই এই তিনটি বিধানসভা এলাকায় থাকেন।
কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত সাতটি বিধানসভার মধ্যে বেলেঘাটায় তৃণমূল প্রার্থী এগিয়েছিলেন ৫০ হাজার ৯০২ ভোটে। এন্টালি ও চৌরঙ্গি কেন্দ্রে লিড ছিল যথাক্রমে ৪১,৩২০ এবং ২৬,৫৬০। কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন ১৩,৫৯২ ভোটে। মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে ছিলেন মাত্র ৮৬১ ভোটে। এখানকার বিধায়ক রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী শশী পাঁজার বিধানসভা কেন্দ্র শ্যামপুকুরে বিজেপি প্রার্থী ২,১৭০ ভোটে লিড পেয়েছেন। জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপি প্রার্থী ৩,৮৮২ ভোটে এগিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ছ’ হাজার ভোটে তৃণমূলের স্মিতা বক্সির কাছে হেরে যান রাহুলবাবু।
কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্র এলাকায় পুরসভার ওয়ার্ড রয়েছে ৬০টি। এর মধ্যে ৫০টিই তৃণমূলের দখলে। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, এরমধ্যে ২৪টি ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে গিয়েছে। একমাত্র বেলেঘাটা বিধানসভা এলাকার সবকটি ওয়ার্ডেই জিতেছে তৃণমূল। এন্টালির দুটি ও চৌরঙ্গির চারটি ওয়ার্ডে পিছিয়ে রয়েছে তারা। জোড়াসাঁকোর ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে আটটিতে পিছিয়ে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। মানিকতলায় আটটির মধ্যে পাঁচটিতে, শ্যামপুকুরের ১১টির মধ্যে পাঁচটিতে ও কাশীপুরের ছ’টির মধ্যে একটিতে বিজেপি লিড নিয়েছে।