নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রবল গেরুয়া ঝড়েও জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে গড় ধরে রাখতে সক্ষম হলেন কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়। কিন্তু তাঁর এই জয়ের পরেও কাঁটা হয়ে থাকল এই লোকসভা কেন্দ্রে শাসকদলের হেভিওয়েট কাউন্সিলারদের ‘হার’। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন মেয়র পরিষদ সদস্য থেকে বরো চেয়ারম্যানরা। উল্লেখযোগ্যভাবে, মুখ্যমন্ত্রী যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেখানেও বিজেপি লিড পেয়েছে। এই তালিকায় বাদ যাননি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বিধানসভা কেন্দ্রও। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভার মধ্যে শুধুমাত্র রাসবিহারী কেন্দ্রেই শাসকদল বিজেপির থেকে পিছিয়ে গিয়েছে। শাসকদলের অন্যতম শক্তিশালী গড়ে মালাদেবী চন্দ্রবাবুর থেকে ৫ হাজার ৪৭০টি ভোট কম পেয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই শাসকদলের কাছে চিন্তা রয়ে গেল এই পিছিয়ে পড়া ওয়ার্ডগুলি। দলের এক শীর্ষনেতার কথায়, চোরাস্রোত যে দলের মধ্যে বইছিল, বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু দলের নেতৃত্ব বুঝতে চায়নি। যেকারণেই এই বিপর্যয়। যদিও দিনের শেষে নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৩০৮ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন মালাদেবী। তবে কলকাতা দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু দ্বিতীয় হয়ে গণনায় কারচুপির অভিযোগ করেছেন। তিনি পুনর্গণনার দাবি করেছেন।
এদিন সকাল ৭টা থেকেই গণনাকেন্দ্রেগুলির সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন কলকাতা দক্ষিণের শাসকদলের কর্মীরা। ১৪৪ ধারায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল সব গণনাকেন্দ্র। পোস্টাল ব্যালট খুলতেই তৃণমূল প্রার্থী এগিয়ে যেতে শুরু করেন। যদিও ততক্ষণে সংবাদমাধ্যমে খবর আসতে শুরু করেছিল, দেশের অন্যান্য কেন্দ্রে এবং রাজ্যেও বিজেপি হু হু করে এগতে শুরু করেছে। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস কমতে শুরু করে শাসকদলের কর্মীদের মধ্যে। রাসবিহারী, ভবানীপুর, কসবা, বেহালা পূর্ব, বেহালা পশ্চিম, বালিগঞ্জ এবং কলকাতা বন্দর বিধানসভা এলাকার গণনা শুরু হতেই তৃণমূল প্রার্থী অনেকটাই এগিয়ে যেতে শুরু করেন। তবে সেই মার্জিন নিয়ে বিভ্রান্তি শুরু হয় নির্বাচন কমিশনের দৌলতে। মাঝেমধ্যে কমিশন যে তথ্য দিতে থাকে, তাতে দেখা যায়, মালাদেবী সাড়ে তিন লাখ, সাড়ে চার লাখ মার্জিনে জিতছেন। বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল এবং ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজে গিয়ে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনের ওই মার্জিন শুনে প্রত্যেকেই হতবাক! শাসকদলের পক্ষে গণনাকেন্দ্রের প্রধান দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ সদস্য দেবাশিস কুমার এবং বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা এত বড় মার্জিন শুনে রীতিমতো অবাক। দেবাশিসবাবু অবশ্য প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, তখনও কোনও কোনও বিধানসভায় ১০-১২ রাউন্ড বাকি রয়েছে। তাহলে এত মার্জিন কীভাবে? পরে অবশ্য নির্বাচন কমিশনের তরফেই বিভ্রান্তি দূর করে সঠিক তথ্য দেওয়া হয়। তাতেই তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় প্রায় দেড় লাখ মার্জিন ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। প্রতাপাদিত্য রোডে কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয়ে বসেই তিনি বললেন, আমি মার্জিন নিয়ে ভাবি না। দলীয় কর্মী এবং মানুষের ভালোবাসা, দলীয় নেত্রীর আশীর্বাদকে পাথেয় করেই আমি জিতছি।
গতবার কলকাতা দক্ষিণ থেকে তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত বক্সি জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ভোটে। সেই মার্জিন এবার বেড়েছে। শাসকদলের প্রার্থী বললেন, সিপিএমের নোংরা রাজনীতির জন্য বিজেপি এত ভোট পেয়ে গেল। নইলে মার্জিন আরও বাড়ত। যদিও বাকি গণনাকেন্দ্রগুলিতে সময় এগতেই শাসকদলের কর্মীদের মুখের হাসি কিছুটা চওড়া হলেও রাসবিহারী বিধানসভা কেন্দ্রের গণনায় অবশ্য হতাশা দেখা গেল। দিনের শেষে গণনার পর তৃণমূল কর্মীরা যখন বালিগঞ্জ গভর্মেন্ট হাইস্কুল থেকে সামান্য হাসিমুখ করে বেরচ্ছেন, তখন বিজেপির কাউন্টিং এজেন্টদের দেখা গেল, সেখানে গেরুয়া আবির খেলতে। তাঁদের মধ্যেই কেউ কেউ বললেন, এই লোকসভা কেন্দ্রে পারিনি। কিন্তু দিল্লির সংসদ তো আমরাই জিতলাম। রাজ্যেও অনেক আসন পেলাম। বাড়তি পাওয়া হিসেবে রাসবিহারী কেন্দ্র থেকেও লিড পেলাম। তাই আনন্দ তো একটু করবই!