বিএনএ, চুঁচুড়া: প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে যোগসাজশ করে দ্বিতীয় স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা করে স্ত্রী সোমা। চুঁচুড়ার সুজন বাগানের ভাড়াবাড়ি থেকে স্বামী বুবাই ঘোষের দেহ উদ্ধারের পর ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিস এমনটাই জানতে পেরেছে। মঙ্গলবার টানা দশ ঘণ্টার বেশি সময় জেরার পর পুলিসের কাছে ভেঙে পড়ে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিস। আর তারপরেই বুবাই ঘোষের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ধৃতকে চুঁচুড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক সোমা ঘোষকে সাতদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সোমার প্রাক্তন স্বামী সহ খুনের ঘটনায় জড়িত বেশ কয়েকজনের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে।
প্রাথমিকভাবে পুলিসের অনুমান, খুনের ঘটনায় সোমার প্রাক্তন স্বামী ছাড়াও আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে। তারা কে বা কারা কোথা থেকে এসেছিল পুলিস তা জানার চেষ্টা করছে। এদিন চুঁচুড়া থানার সামনে মৃতের দাদা দেবাশিস ঘোষ বলেন, আমার ভাই কেরলে কাজের জন্য ছিল বলে জানতাম। ফোনে বাড়িতে জানিয়েছিল একটা মেয়েকে ভালোবাসে। সে তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ভাই যে এখানে এসে এই মেয়েটাকে বিয়ে করে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিল তা আমরা জানতাম না। ভাইকে যে নৃশংসভাবে খুন করেছে আমরা তাদের কঠোর শাস্তি চাই।
ঘটনার তদন্তে নেমে সোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস জানতে পেরেছে, বছর ছয়েক আগে নদীয়ার এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। বছর পাঁচেক ঘর করার পর পারিবারিক কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করে সোমা বাপেরবাড়িতে চলে আসে। তারপর ফেসবুকের মাধ্যমে দত্তপুকুরের বাসিন্দা বুবাইয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর বছরখানেক ধরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। ধীরেধীরে প্রেমের পর ৮ ফেব্রুয়ারি কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করে তারা। কিন্তু, বুবাইয়ের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তাই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এসে চুঁচুড়ায় ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে।
পুলিস জানিয়েছে, বিয়ের পরেই সোমা বুঝতে পারে যে বুবাই বেকার, সংসার চালানোর মতো সামর্থও নেই। তাই দ্রুত এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু বুবাই সোমাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। তাই বুবাইয়ের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে ফের প্রথম পক্ষের স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সোমা। তাকে বুবাইয়ের হাত থেকে বাঁচানোর আবেদন জানায়। এরপরেই সপ্তাহখানেক আগে কাজ খুঁজতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে খুনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। শুধু তাই নয় তারপরেই প্রথমপক্ষের স্বামীকে নিয়ে এসে গলির সামনে থেকে বাড়ি ও ইশারায় তাদের ঘর সম্পর্কে সোমা বুঝিয়ে দেয়। আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী দুপুরে মায়ের কাছে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে যায় সোমা। বিকালে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাড়ির মালিক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে যান। এরপর সন্ধ্যায় প্রথমপক্ষের স্বামী ও তার সঙ্গীরা ঘরে ঢুকে বুবাইকে খুন করে বাথরুমে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
তার কিছুক্ষণ বাদেই ড্রেনে রক্ত দেখে স্থানীয় মানুষ, বাড়ির মালিক ও পুলিসকে খবর দেয়। তখন পুলিস এসে দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য থেকে পুলিসের অনুমান যে নিপুণভাবে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে, তাতে কোনও পেশাদার খুনিকে এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।