বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
চমক আরও তা হল, রাজ্যের মধ্যে মাধ্যমিকে ৬৮৩ নম্বর পেয়ে অষ্টম স্থানাধিকারী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুরের আমতলা নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের সেমন্তী চক্রবর্তী রীতিমতো টক্কর দিয়েছে নম্বরেও। সেমন্তী অঙ্কে একশোতে একশো পেয়েছে। অন্তরাও অঙ্কেতে পেয়েছে একই নম্বর, একশো। ভৌত বিজ্ঞানে সেমন্তী পেয়েছে ৯৭ নম্বর। সেখানে তাকে টপকে অন্তরা পেয়েছে ৯৯ নম্বর। ইতিহাসে সেমন্তী পেয়েছে ৯৮ নম্বর। অন্তরাও একই নম্বর পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ইংরেজি, জীব বিজ্ঞান, ভূগোল বিষয়ে সেমন্তীর থেকে অন্তরা মাত্র ২, ৫, ৬ নম্বরে পিছিয়ে রয়েছে।
কাকদ্বীপ আদর্শ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শ্যামসুন্দর জানা বলেন, খুব মুখচোরা মেয়ে অন্তরা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা আহামরি নয়। তার উপরের দু’জন দাদা রয়েছে। তারা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। রীতিমতো ধার করে দুই ছেলে ও মেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাতে হয় বাবা আবদুল খলিল শেখকে। সেই কারণে দু’ বেলা খাওয়া-দাওয়াতে কোপ পড়ে। কিন্তু কখনও তা প্রকাশ করেন না। ছেলে-মেয়েকে বুঝতেও দেন না। তা স্বীকার করেন কাকদ্বীপ ভূতমোল্লার পোল আনন্দনগরের বাসিন্দা ৫৭ বছরের আবদুল খলিল শেখ। বলেন, অভাব থাকলেও পড়াশুনার জন্য ধার করি। তাতে কোনও আক্ষেপ নেই।
তিনি বলেন, মেয়ে স্কুল থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পে নবম ও দশম শ্রেণীতে দু’ দফায় সব মিলিয়ে তিন হাজার টাকা পেয়েছিল। সেটাও কিছুটা সাহায্য করেছে। তবে মেয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হলে খরচ বেড়ে যাবে। তা নিয়ে খুবই চিন্তায় আছি। কীভাবে সামাল দেব তা ভেবে পাচ্ছি না। আদর্শ বিদ্যামন্দির থেকে শুধু অন্তরাই নয়, আরও তিনজন স্যমান্তক জানা, শ্রেয়া সামন্ত, সুকন্যা দাস খুব ভাল ফল করেছে। তিনজনই ৬৬৮ নম্বর পেয়েছে। প্রত্যেকের ৯০ থেকে ১০০র মধ্যে নম্বর। এর ভিতর স্যমান্তক ও সুকন্যা যথাক্রমে অঙ্কে এবং ভৌত বিজ্ঞানে ১০০ পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে কাকদ্বীপের এই আদর্শ বিদ্যামন্দির স্কুল থেকে আরও একজন সংখ্যালঘু পরিবারের ছেলে মাসুম আখতার চতুর্থ হয়েছিল। অন্যদিকে, সাগরদ্বীপের ফুলবাড়ি শীতলা হাইস্কুলের একেবারে গরিব ঘরের ছাত্র রাহুল দাস ৫৪৩ নম্বর পেয়ে সকলকে চমকে দিয়েছে। ওই স্কুলে রাহুল সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। তার বাবা মন্টু দাস দিনমজুর। রাহুলের দাদা আর্থিক অনটনের জন্য মাঝপথে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছে। সে এখন বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করেন। রাহুল জানিয়েছে, স্কুল থেকে তাকে সবরকম সাহায্য করেছে। তবে এবার একাদশ শ্রেণীতে পড়াশুনার খরচ কীভাবে চালাবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে।