রাহুল দত্ত, দমদম: ভোট শুরু হওয়ার কথা ছিল সকাল ৭টায়। বেলা ১০টা গড়িয়ে গেলেও তখনও ভোট শুরু হয়নি। কারণ ইভিএমে যান্ত্রিক গোলযোগ। প্রতিবাদে মুখরিত না হলেও, লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের চোখে-মুখে তখন বিরক্তি-ক্লান্তি-ক্ষোভ। তাসত্ত্বেও মুখে রা নেই তাঁদের। এমন সময় ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে একজন বেরিয়ে এসে জোড়হাতে দুঃখপ্রকাশ করে বললেন, তিনি ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার। সকাল থেকে ভোট শুরু করতে না পারার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। এখন সবকিছু ঠিক হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত ভোটাররা। কিন্তু, প্রিসাইডিং অফিসারের কথা শুনে সেই ক্লান্তি-ক্ষোভ-বিরক্তি মুহূর্তে উবে গেল। হাসিমুখে একে একে বুথে ঢুকতে শুরু করলেন। ঘটনাটি ঘটেছে দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা এলাকার জ্যাংড়া দক্ষিণের মহামায়া সরণীর একটি বুথে।
রাজনৈতিক দল এবং ভোটারদের দাবি অনুযায়ী, দমদম লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ২০০ বুথে এদিন সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই ইভিএম খারাপ হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও সকালে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় ইভিএম ঠিকভাবে কাজ করেনি। ফলে ভোট শুরু করতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তবে কোনও এক জাদুবলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হলেও এদিন সকাল থেকেই দমদম লোকসভা কেন্দ্রে ভোটারদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল ৭টার আগেই বহু বুথে লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে। এমনকী ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনও বিরক্তি বা ক্লান্তি ভোটারদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়ন। উল্টে বলতে শোনা গিয়েছে, লাইনে যখন দাঁড়িয়েছি, এবার ভোট দিয়েই যাব। প্রবল গরমকে উপেক্ষা করে ভোটদানের যে স্পৃহা দেখা এখানে দেখা গেল, তা ছড়িয়ে ছিল রাজারহাট থেকে বরানগর, দমদম থেকে কামারহাটি, খড়দহ সর্বত্রই। তবে জ্যাংড়া এলাকার একটি বুথে এক বয়স্ক ভোটারের কথায়, সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। ভোট শুরু হতে বিলম্ব হওয়ায় বাড়িতে চলে যাই। লাইনে সামনের এবং পিছনের ভোটার পরিচিত। তাঁরাই পরামর্শ দিয়েছিল, কাকু বাড়ি চলে যান। ভোটগ্রহণ শুরু হলে ডাকব। ৯টার পর ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ সেই পরিচিতদের একজন ফোন করে বলে, কাকু ভোট দিতে আসুন। তারপর ফের বুথে গিয়ে ভোট দিয়ে আসি। অনেকেই এভাবে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি চলে যান। আবার ভোটারদের বড় অংশকে লাইনেই অপেক্ষা করতে দেখা গিয়েছে। কৃষ্ণপুর মাঝেরপাড়ার একটি বুথে এক ভোটারের কথায়, সকাল সাড়ে সাতটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন প্রায় সাড়ে ১০টা বাজে, লাইন এতটুকু এগয়নি। তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও লাইন ছেড়ে যাইনি। ভোট দিয়েই যাব। দমদম লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন জায়গায় এদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এই চিত্রই দেখা গিয়েছে। তবে বিক্ষিপ্ত ঘটনাও ঘটেছে। কৃষ্ণপুরের একটি বুথে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় সাধারণ ভোটারদের। সেই সময় একজনের ঘুসিতে প্রিসাইডিং অফিসারের নাক ফেটে যায়। যদিও ভোটারদের একাংশের দাবি, যে ঘুসি মেরেছে, সে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। ওই বুথে গন্ডগোল পাকানোর জন্য পরিকল্পনা করেই প্রিসাইডিং অফিসারকে ঘুসি মারা হয়েছে। যদিও ওই প্রিসাইডিং অফিসার এবিষয়ে কোনও অভিযোগ জানাতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেটা সম্পূর্ণ ভুল বোঝাবুঝি থেকে। তিনি কোনও অভিযোগ করছেন না।