পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বামপ্রার্থীর বক্তব্য যে অমূলক নয়, তা ঘড়ির কাঁটা ১১টায় পৌঁছতেই বোঝা গেল। সন্দেশখালি, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, বসিরহাট উত্তর, হিঙ্গলগঞ্জ থেকে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে। কোথাও বিরোধী দলের এজেন্টের থেকে কাগজপত্র ও টাকাপয়সা কেড়ে তাঁকে মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, কোথাও আবার এজেন্টকে ‘অপহরণ’ করারও অভিযোগ ওঠে। আবার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের ভোট দিতে যাওয়ার পথে আটকানোর জন্য সবরকম ব্যবস্থা রাখার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। রীতিমতো দাপটের সঙ্গেই বসিরহাটে দিনভর ভোট করাল শাসকদল। উল্টোদিকে বিরোধীপক্ষ শাসকদলের সেই দাপটের কাছে নিতান্তই ‘শিশু’ হিসেবে বিবেচিত হল।
বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসুর অভিযোগ, মানুষ কেন নিজের ভোট দিতে পারবেন না? গণতান্ত্রিক অধিকার লুট করা হয়েছে। সব জায়গায় বিরোধী পক্ষ আক্রান্ত। প্রায় ১০০’র উপরে বুথ দখল করে ছাপ্পা দিয়েছে শাসকদলের সশস্ত্র বাহিনী। ভয় দেখিয়ে ভোট লুট করেছে তারা। আদৌ কেন্দ্রীয় বাহিনী কি ছিল না, প্রশ্ন তুলেছেন পদ্ম শিবিরের প্রার্থীই।
এদিন বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে সকাল থেকে উৎসবের মেজাজে ভোট শুরু হলেও বেলা বাড়তেই তা আতঙ্কের চেহারা নেয়। বসিরহাট উত্তরের আমলানী-হরিপুর, মাখালগাছা, মুরারীশাহ, ভেবিয়া, বসিরহাট দক্ষিণের ঘোড়ারস, কুলীনগ্রাম, টাকির তোকিপুর, শাঁকচূড়ার মতো এলাকা থেকে ভুরি ভুরি অভিযোগ আসতে শুরু করে। অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ হয় সন্দেশখালি-হিঙ্গলগঞ্জ-হাড়োয়া-মিনাখাঁ বিধানসভা এলাকায় ভোটদান পর্বের সময় এগতেই। বিরোধীপক্ষের অভিযোগ, দুপুর দেড়টা-দু’টোর মধ্যে সন্দেশখালি প্রায় সব বুথ দখল হয়ে যায়। গেরুয়া শিবিরের এজেন্টদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে, তাঁকে বুথ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির নেতাদের অভিযোগ, হিঙ্গলগঞ্জের ভাণ্ডারখালির একটি বুথ থেকে তাঁদের মহিলা এজেন্টকে অপহৃত করে শাসকদল। অপহরণ করা হয় সন্দেশখালি মণিপুরে একটি বুথের বিজেপি এজেন্টকেও। ভবানীপুর ১ এবং ২, পাটলি খানপুর, খুলনা এলাকায় অবাধে বুথ দখল ও ছাপ্পা চলেছে। সন্দেশখালির সেহারা পঞ্চায়েত, সন্দেশখালি ব্লক-২, দুর্গামণ্ডপ সহ গোটা বিধানসভা এলাকায় সশস্ত্র তৃণমূল বাহিনীর দাপটের অভিযোগ তুলেছেন বাম-বিজেপি-কংগ্রেস, তিন পক্ষই। বাম প্রার্থীর অভিযোগ, তৃণমূল নেতা শাহজাহান মণ্ডলের নেতৃত্বেই এই দখল এবং ভোটারদের ঘর থেকে না বেরতে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে শাসকদল। যদিও শাহজাহান মণ্ডলের দাবি, সব মানুষ ভোট দিয়েছেন। উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আর অভিযোগ তো অনেকই ওঠে। সেগুলি কতটা সত্য, তা সবাই জানেন। আবার বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুসরত জাহানের কথায়, অভিযোগ আমরাও করতে পারি। কিন্তু শান্তিপূর্ণ ভোটে আমরা ব্যাঘাত ঘটাতে চাই না। মানুষ নিজের ভোট নিজেরাই দিচ্ছেন। তাই সব অভিযোগ মিথ্যে।
হিঙ্গলগঞ্জের অবশ্য বরুণহাট, চক পাটলি, দুলদুলি এলাকার কার্যত প্রায় সব বুথই সকাল থেকে আগলানোর অভিযোগ ওঠে শাসকদলের কর্মীদের বিরুদ্ধে। দুপুরে আচমকাই ভ্যাবলায় আর এন মুখার্জি রোডের ধারে বিজেপির ক্যাম্প অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে।
হাড়োয়া বিধানসভা অন্তর্গত শাসন সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ভোট লুট এবং এজেন্টদের মারধরের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। অভিযোগ, হাড়োয়া বিধানসভা এলাকাকে ‘বিরোধীশূন্য’ করে লুট চালিয়েছে শাসকপক্ষ। দুপুরে অবশ্য পরিস্থিতি আরও তপ্ত হয়ে ওঠে শাসনে কুইক রেসপন্স টিমের গাড়ি আক্রান্ত হলে। কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিতে বলে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, এই অভিযোগে শাসকদলের মদতে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। আচমকাই ইটবৃষ্টি শুরু হয়। তাতে গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনার কিছু পরই হাড়োয়ার বকজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫ নম্বর বুথে পুলিসের পোশাক পড়ে ছাপ্পা দিতে গিয়ে ধরা পড়ে বসিরহাটের মালতীপুরের বাসিন্দা বাবর আলি শেখ। স্থানীয়রা গণপিটুনি দিয়ে তাকে বাহিনীর হাতে তুলে দেন।