বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
ছ’টার মধ্যে সকলকে বুথে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কখনও কখনও বলতে শোনা গেল, মাথা ঠাণ্ডা রেখে চোখকান খোলা রেখে কাজ করে যেতে হবে। কেউ মোটরবাইক নিয়ে দল বেঁধে ঘুরবে না। গাছতলায় চুপ করে বসে থাকবে। জওয়ানরা যাই করুক, কেউ তাদের সঙ্গে মুখ লাগাতে যাবে না। শান্ত ছেলের মত বুথ থেকে দূরে থাকার যা নিয়ম তা মেনে চলবে। বিরোধী দল যাতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ তোলার সুযোগ না পায়। আমাদের দেখাতে হবে এ ভাঙড় সেই বোমা-গুলি আর বাইকবাহিনীর দাপাদাপি ও আতঙ্কের শহর নয়। একেবারে অচেনা বদলে যাওয়া এক ভাঙড়। কথা বলতে বলতে কখনও সকাল হয়ে গিয়েছে টের পাননি ভাঙড়ের বিতর্কিত নেতা প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম।
সকাল সাড়ে সাতটা। ছেলে হাকিবুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলেন আরাবুল। চোখে মুখে রাত জাগার কোনও ছাপ নেই। পরনে নীল জিনসের প্যান্ট ও সাদা সুতির ফুলহাতা জামা। হাতে পাঁচটা মোবাইল। সাদা স্করপিও গাড়িতেই বাড়ির কাছে উত্তর গাজিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান। আচমকা গেটের সামনে উর্দিপরা জওয়ান পথ আটকে দাঁড়ান। মোবাইল নিয়ে ঢোকা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। কোনও কথা না বলে শান্তভাবে মোবাইলগুলি সঙ্গী একজনের কাছে জমা দিয়ে দেন। এরপর ভোটের কার্ডটি এগিয়ে দেন ভাঙড়-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি। তা দেখার পর বাবা ও ছেলেকে ছেড়ে জলপাই রঙের পোশাকের উর্দিধারীরা। বিশাল লম্বা লাইন। ধীর পায়ে সেই লাইনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালেন বাপ-বেটা। একবারের জন্য নিজের দাপট দেখাতে চাইলেন না।
এরমধ্যে পাড়ার লোকজন ভোটের লাইন থেকে বেরিয়ে এসে কেউ দাদা, কেউ হাত ধরে একেবারে লাইনের সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য শশব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মিনিট দশ কেটে যাওয়ার পর ভোট দিয়ে বুথের বাইরে বেরিয়ে এসে আঙুলে কালো ছাপ দেখিয়ে বললেন, ভাঙড়ে এবার শান্তিতেই ভোট হচ্ছে দেখে নেবেন। আসলে বিরোধী সিপিএম ও বিজেপির এখানে কোনও অস্তিত্ব নেই। তবু দেখে নেবেন, ওরা আমার নাম করে অহেতুক নালিশ করছে। পাশে দাঁড়ানো ছেলে হাকিমুলের মোবাইল বেজে উঠল। ও প্রান্ত থেকে কে যেন বলছে, দাদা টোনা গ্রামের বুথে জমি কমিটি কোনও এজেন্ট বসাতে পারেনি। খুব ভাল খবর বলে ফোন রেখে দিলেন হাকিমুল। এবার হেসে বললেন, টোনা হল জমি কমিটি তথা সিপিএমের খাসতালুক। সেখানে ওদের কেউ নেই মানেই আমাদের নৈতিক জয় হয়েছে।
এর মধ্যেই জমি কমিটির আহাদ আলি এসে কাশীপুর থানার ওসিকে নালিশ করলেন। বললেন, স্যার দলের এক এজেন্টকে আরাবুল বাহিনীর লোকজন বার করে দিয়েছে। ওসি অবশ্য তৎক্ষণাৎ সক্রিয় হলেন। সিপিএমের এজেন্টকে নিয়ে বুথে বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।
ঘড়িতে সাড়ে ৯ টা। পোলেরহাট সবজি বাজারে এসে গাড়ি থামল আরাবুল ইসলামের। ততক্ষণে অবিরাম ফোন আসছে। কোন মোবাইলে বিভিন্ন বুথের ভিড় ও সেখানকার মেসেজ আসছে। এরমধ্যে চালতাবেড়িয়ার দিক থেকে আরও একটি সাদা স্করপিও গাড়ি এসে থামল। তা থেকে নামলেন ভাঙড়-২ ব্লকের সভাপতি ওহিদুল ইসলাম। উভয় ফিসফিস করে কি যেন আলাপ করে নিলেন। এরপর ওহিদুল ইসলামের গাড়িতে উঠে বসলেন আরাবুল। গাড়ি ছুটছে পোলেরহাট-১, ২, শানপুকুর, ভগবানপুর, বামনঘাটা, বেওতা-১, বেওতা-২, চালতাবেড়িয়া, ভোগালি-১, ভোগালি-২। যেতে যেতে কোথাও গাড়ি থামিয়ে গাছের তলায় বসা অনুগতদের ডেকে নিয়ে জানতে চাইছেন। সব ঠিক আছে। ওপাশ থেকে হাত তুলে সকলে বলছেন, দাদা সব চুপ।
কাঁঠালবেড়িয়া দিয়ে যাওয়ার সময় এক জায়গাতে অনুগতরা এসে বললেন, সব ফুল। তবে জনা পঞ্চাশ উলটো সুরে বাঁশি বাজিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ফিক করে হাসলেন আরাবুল। বললেন, ছেড়ে দে। আম পাকতে দে। আঁটিটা তখন আর থাকবে না। দুপুর আড়াইটে বেজে গিয়েছে। ফের উত্তর গাজিপুরে এসে থামল আরাবুলের গাড়ি। খুব শান্ত সুরে আরাবুল বললেন, অনেক ঝড় গিয়েছে। তবু এই দল থেকে সরে যাইনি। এবারও তাই প্রাণপাত করলাম। ইচ্ছা আছে সোমবার অনেকক্ষণ ঘুমাব। এরমধ্যেই মিমি চক্রবর্তী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েক দফায় ফোন এসেছে ওহিদুল ও আরাবুল ইসলামের কাছে। ভাল ভোট হচ্ছে বলে জানিয়ে দিলেন দু’জনই।