কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কাঠফাটা রোদ্দুর থেকে রেহাই পেতে সকাল সকালই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন ভোটাররা। সকাল ৭টা বাজতে বাজতেই একাধিক বুথে লম্বা লাইন দেখা যায়। রামনামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারপোল প্রাথমিক বিদ্যালয়, নূরপুরের কাছে গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো একাধিক ভোট কেন্দ্রে লম্বা লাইন চোখে পড়ে। ভোটারদের উৎসাহও ছিল তুঙ্গে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটের লাইনও ছোট হয়ে যায়। তীব্র গরমে অবশ্য প্রাণ গেল এক ভোটারের। সাতগাছিয়া বিধানসভার রানিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দোস্তিনা পেয়ালি গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। মৃতের নাম অধীর মণ্ডল। সানস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে তাঁর বলে দাবি চিকিৎসকদের।
ডায়মন্ডহারবার লোকসভা জুড়ে যেন ঘাসফুলেরই আধিপত্য। প্রত্যেক বুথের ২০০ মিটার দূরে ক্যাম্প করে বসে তৃণমূল কর্মীরা। আর মোড়ে মোড়ে যুবকদের ভিড় তো আছেই। কোন দলের তাঁরা, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি কিংবা অন্যান্য গাড়ি দেখলেই থামিয়ে সেই ‘দাদা’রা মিষ্টি করে বার্তা দিচ্ছেন, ‘দাঁড়াবেন না, চলে যান’। বাসুলডাঙা, গুরদাসনগর, গোবিন্দপুর, ফলতার বিস্তীর্ণ এলাকা, কোটাডাঙা, সরিষা, সহরারহাট, ডায়মন্ডহারবার শহর সহ এমন বহু এলাকাতেই বিরোধী কোনও ক্যাম্প চোখেই পড়ল না। শুধু তাই নয়, বুথের আশপাশে তৃণমূলের পতাকা, পোস্টারে ছয়লাপ। বাকি দলের কোনও চিহ্ন নেই সেখানে। এমনকী প্রায় বেশিরভাগ বুথেই সিপিএম এবং বিজেপি’র এজেন্ট নেই।
বিজেপি অবশ্য কিছুটা স্বীকার করছে, যে তাদের সর্বত্র এজেন্ট ছিল না। তার জন্য তৃণমূলের হুমকিকেই দায়ী করছে তারা। তৃণমূলের পাশাপাশি বেশ কিছু বুথে নির্দল প্রার্থীর এজেন্টরা বসে আছেন। কিন্তু তাঁর প্রার্থী বা দলের নাম জিজ্ঞাসা করতে যেন আকাশ ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি। কেউ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, জানি না। কেউ আবার তৃণমূলের এজেন্টের থেকে জেনে নাম বললেন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় যে গোলমাল, বোমাবাজি হয়েছিল, সেরকম কোনও পরিস্থিতি এই লোকসভা ভোটে হয়নি। অভিযোগ অবশ্য ছিল না, তা নয়। সিপিএম প্রার্থী দিনভর কমিশন, পুলিসে অভিযোগ করেই কাটালেন। তাঁর অভিযোগ, ফলতার ১, ২৪, ১৪৯, ১৭৩, ১৭৪, ৯৩, ৯৯, ১০১, ১৪৪ এবং বিষ্ণুপুরের ১০১, ১০২, ১০৫, ১০৭, ১১০, ১১২, ১১৩, ১৩৩, ১৪৫ ও ১৭৭ নম্বর বুথ সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা দখল করে অবাধে ছাপ্পা মেরেছে। তাছাড়া ফলতার গোপালপুর, দিঘিরপাড়, নপুকুড়িয়ার বিভিন্ন বুথ দখল হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। বিক্ষিপ্ত অশান্তি খবর পাওয়া যায় বজবজের ডোঙারিয়ায়। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নীলাঞ্জনবাবুর বক্তব্য, তাঁকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা খুন করতে চেয়েছিল।
পাশাপাশি, বঙ্গনগর ২ অঞ্চলের বাণেশ্বরপুর এবং সাহিপুর, হরিণডাঙা ১ অঞ্চলে কালি দিয়ে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। বজবজ বিধানসভার কালিকাপুর উত্তরপাড়া ১৬৩ নম্বর বুথের আশপাশের এলাকায় ভোটরাদের শাসানি এবং মারধরের অভিযোগও উঠে আসে। আবার সাতগাছিয়া বিধানসভা অন্তর্গত গোবিন্দপুর, কালীচরণপুর ৪৫ নম্বর বুথে বিজেপি এজেন্টকে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে শাসক দলের বিরুদ্ধে। ইভিএম বিভ্রাট নিয়ে বেশ সমস্যা পড়তে হয় ভোটারদের। যেমন বিষ্ণুপুর বিধানসভার গাববেড়িয়ায় ২৬৫ নম্বর বুথে ইভিএম খারাপ হওয়ার ফলে এক ঘণ্টা দেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
তবে সার্বিকভাবে ভোট নিয়ে বেশ খুশি জেলা বিজেপি। জেলার সহ সভাপতি তথা ডায়মন্ডহাবরারের আহ্বায়ক সুফল ঘাটু বলেন, দু’একটা ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। মানুষ যে উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছেন, তাতে এবার ‘নিঃশব্দ বিপ্লব টু’ হয়েছে।