কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
একে একে যাদবপুর, গড়িয়া, সোনারপুর স্টেশন থেকে কিলবিল করে যাত্রী উঠতে থাকে। তার অধিকাংশই ভোটকর্মী। নিজেদের মধ্যে কথাবার্তাতেই তা স্পষ্ট। মুখোমুখি আসনে সবাই সবাইকে না চিনলেও ভোটের ডিউটি শুনেই আলাপচারিতা সেরে ফেলছেন। আর তাঁদের কথোপকথনে যে বিষয়টি বারেবারে উঠে আসছে, সেটা হল নিরাপত্তা।
যাত্রীদের কথাবার্তায় তখন গোটা কামরা গমগম করছে। এক কোণ থেকে শোনা গেল, ফকিরচাঁদ কলেজে ডিউটি পড়েছে। ছ’টা দফা তো দেখলাম। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও অশান্তি আটকানো যায়নি। আমাদের এখানে কী যে হবে, জানি না। বুথে বাহিনী থাকবে ধরে নিয়েই আমরা যাচ্ছি। ভোটকর্মীদের এমন নানা কথা শুনতে শুনতে সাড়ে ১১টায় ট্রেন ডায়মন্ডহারবার পৌঁছাতেই কামরা থেকে কে যেন বলে উঠলেন, চলুন যুদ্ধ করতে এসে গিয়েছি। প্রস্তুত হয়ে নিন।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে মেইন রাস্তা ধরে থানার দিকে যেতে চোখে পড়ল কয়েকজন কেন্দ্রীয় বাহিনী গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে ডাবের জলে গলা ভেজাচ্ছেন। তার অদূরে থাকা ডায়মন্ডহারবার থানার সামনে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস। রাজ্য পুলিস এবং বাহিনীর জওয়ানরা অপেক্ষা করছেন। ভোটের আগে এলাকার কী অবস্থা, তা জানতে বিভিন্ন এলাকা পরিক্রমা শুরু করতেই উঠে এল নানা মতামত। তবে শহর বা তার বাইরে টহল দিচ্ছেন জওয়ানরা, তা কিন্তু চোখে পড়ল না। স্টেশন থেকে রামনামপুর স্কুল মাঠের দিকে যেতে যেতে কোথাও বাহিনীর জওয়ানদের টহল দিতে দেখা গেল না। গন্তব্যস্থলে একটি স্কুলে ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। কাঠফাটা রোদ্দুর থেকে বাঁচতে ক্লাসরুমেই বিশ্রাম নিচ্ছেন বাহিনীর জওয়ানরা।
সেখান থেকে আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে কিছুটা যেতেই কয়েকটি দোকান চোখে পড়ল। এক দোকানদারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, বাহিনী এসেছে। কিন্তু, পাড়ায় টহল দিতে আমরা দেখিনি। আমাদের এলাকা শান্তিপূর্ণ। তবে ভোটে বাহিনী থাকা দরকার। কেন এমন বলছেন, তার অবশ্য স্পষ্ট কোনও উত্তর দিতে চাইলেন না তিনি। সেই দোকান ছাড়িয়ে পরের পাড়ায় রাস্তার কলে বাসন ধুচ্ছিলেন এক মহিলা। তাঁকেও বাহিনীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই, তিনি বলে উঠলেন, মেইন রাস্তায় দেখেছি জওয়ানদের। পাড়ায় নেই। তবে ভোটে ওরা থাকলে আমাদের অনেক শান্তি। ভোটের দিন কী হবে, না হবে আমরা জানি না। তাই নিজের ভোট নিজে দিতে যাতে পারি, তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা দরকার।
বাহিনীকে পাড়ায় না দেখতে পেয়ে কিছুটা যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ আবার কারও মতে, সারা বছর এক রকম, ভোট এলেই অশান্তি। বাহিনী থাকলে অন্তত বুথ পর্যন্ত পৌঁছনো যাবে। শান্তিপ্রিয় এলাকা সত্ত্বেও বাহিনী দিয়ে ভোট— কোথাও যেন ডায়মন্ডহারবারবাসীদের মধ্যে একটা চাপা রাগ এবং ভয় যে কাজ করছে, তা কিন্তু বলাই যায়।