গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা ওই কিশোর হাওড়ার একটি বেসরকারি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। তার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদে রয়েছেন। কর্মসূত্রে তিনি বর্তমানে কঙ্গোতে। সম্প্রতি কলকাতায় এসেছেন। গত রবিবার ওই কিশোর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তার আগে তার কাছে একটি ফোন আসে। তাকে হাওড়া স্টেশনে আসতে বলা হয়। বাড়িতে সে বলে যায় বাইরে যাচ্ছে। এরপর আর ফেরেনি। দীর্ঘক্ষণ বাড়ি না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। এরপরই তাঁরা জোড়াসাঁকো থানায় অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। অপহরণের মামলা রুজু করে শুরু হয় তদন্ত।
সোমবার তার পরিবারের কাছে একটি ফোন আসে। তাতে বলা হয়, ওই কিশোর তাদের কব্জায় রয়েছে। তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে গেলে ৩০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে। পরিবারের লোকজন তা পুলিসকে জানান। তদন্তকারী অফিসাররা দেখেন, ফোনটি তাদের চেনা নম্বর থেকেই করা হয়েছিল। এরপর আরও বেশ কয়েকবার টাকা দাবি করে ফোন করা হয়। দরাদরির পর ১৫ লক্ষ টাকায় রফা হয়। দেখা যায়, সমস্ত ফোনই এসেছে অপহৃতের ফোন থেকে। এখান থেকেই সন্দেহের সূত্রপাত। অফিসারদের মনে প্রশ্ন জাগে, যদি সত্যিই সে অপহৃত হয়ে থাকে, তাহলে তার মোবাইল কেন ব্যবহার করছে অভিযুক্তরা। কারণ এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে অপহরণকারীরা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন করে এবং বাবারবার সিম বদল করে। নাহলে টাওয়ারের সূত্র ধরে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
অফিসাররা ধরেই নেন, ছেলেটি অপহৃত হয়েছে। সেইমতো তাঁরা তদন্ত শুরু করেন। অপহরণকারীরা প্রথমে তার পরিবারকে আসানসোলে আসতে বলে। সেইমতো পুলিসের টিম তার বাবা ও কাকাকে নিয়ে সেখানে রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছনোর পর ফের অপহরণকারীরা জায়গা বদল করে। তাঁদের জসিডিতে আসতে বলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা আসানসোল থেকে ট্রেন ধরে সেখানে রওনা দেন। কিন্তু বারবার ঘোরাতে থাকে অভিযুক্তরা। শেষমেশ পরিবারকে বিহারের ঝাঁঝায় আসতে বলা হয়। অপহরণকারীদের কথামতো ঝাঁঝা স্টেশনের একটি ফাঁকা জায়গায় এসে তাঁরা অপেক্ষা করতে থাকেন। সেখানে অভিযুক্তদের একজন এসে টাকা নিয়ে যায়। সে জানিয়ে যায়, তাঁর ছেলেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিছুক্ষণ পর ফের তারা এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলে। অবস্থান কোথায়, তা তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হবে। এই সময় অপহৃতের বাবার চোখে পড়ে ঝাঁঝা স্টেশনে রেললাইনের উপর দুই ব্যক্তি টাকা ভাগবাটোয়ারা করছে। এদের মধ্যে রয়েছে তাঁর শ্যালক মণীশকুমার চৌরাসিয়া। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি চিৎকার শুরু করে দেন। পুলিসের টিম মণীশ ও তার এক সহযোগীকে ধরে ফেলে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ১৫ লক্ষ টাকা। ধৃতরা জানায়, অপহৃত পাটনায় রয়েছে। সেইমতো টিম সেখানে গিয়ে রবিবার বিকেলে তাকে উদ্ধার করে।
ওই কিশোরকে সত্যিই অপহরণ করা হয়েছিল নাকি গোটাটাই সাজানো নাটক, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিস। এ নিয়ে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিসি জেরায় ভেঙে পড়ে সে শেষপর্যন্ত স্বীকার করে নেয়, পুরো পরিকল্পনা সে ও তার মামা মিলে করেছে। তার ও মামার টাকার প্রয়োজন ছিল। প্রথমে বাইক কেনার জন্য বাবার কাছে টাকা চায় পরিবারের কাছে। এরপর ব্যবসা করবে বলেও টাকা চেয়ে বসে। কিন্তু তাকে টাকা দেননি বাবা। এই টাকা হাতাতেই দু’জনে মিলে গোটা পরিকল্পনা সাজায়।