বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
স্বপনবাবুর বক্তব্য, ১৮ মার্চ দিনটার কথা ভাবলেই শিউরে উঠছি। খুব হাসিখুশি ছিল আমার স্ত্রী। সন্তান হওয়ার দিন ফোনে বলল, তোমার জন্য দু’টি উপহার আসছে। কী করুণ পরিণতি হল! ও চলে গেল, দুই সন্তান চলে গেল। অভিযুক্ত চিকিৎসকের কঠোর শাস্তি চাইছি। বাঙুর হাসপাতাল স্ত্রীর পরিচয়ও ফাঁস করেছে। ওয়ার্ডের নার্সদের জানিয়ে রেখেছিল। এইচআইভি আক্রান্ত জেনে ওরা স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। ডেথ সার্টিফিকেটেও এইচআইভি লিখে সকলকে জানিয়েছে। এর শেষ দেখে ছাড়ব। যেখানে যাওয়ার যাব। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এইচআইভি আক্রান্তদের সংগঠনের সভাপতি ক্ষিতীশ মণ্ডল (অনুমতিক্রমে নাম লেখা হয়েছে) বলেন, অভিযোগ মারাত্মক। সমস্ত মহলে জানিয়ে ন্যায়বিচার চেয়েছি। স্যাকস-এর যুগ্ম অধিকর্তা (কেয়ার অ্যান্ড সাপোর্ট) ডাঃ পি মণ্ডল ফোন ধরেননি। ন্যাকোর এক পদস্থ আধিককারিক বলেন, ঘটনার তদন্ত হবে। অভিযোগের কাগজপত্র খতিয়ে দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, আক্রান্ত মহিলার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল ছিল। স্বামী এবং সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে কথা বলা হবে। এম আর বাঙুরের সুপার ডাঃ অসীম হালদার বলেন, গাফিলতির অভিযোগ পাইনি। তবে ভালোই মনে আছে ওই প্রসূতির কথা। রেফার হয়ে এসেছিলেন। অবস্থা খুব আশঙ্কাজনক ছিল। ওঁর চিকিৎসার ব্যাপারেও সব ধরনের সাবধানতা নেওয়া হয়। গাফিলতি হয়নি বলেই ধারণা।
স্বাস্থ্য দপ্তর এবং বাঙুর সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে সোমাদেবীকে গত ১১ মার্চ বাঙুরে রেফার করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় এইচডিইউতে রাখা হয়। পরে বেডে পাঠানো হয়। ১৮ মার্চ প্রসবের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। সেই সময় অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। ওইদিন রাত ৮টা ৫-এ মারা যান সোমাদেবী। বের করে আনা হয় সাড়ে আট মাস বয়সি দু’টি মৃত যমজ সন্তানকেও।
স্বপনবাবুর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে বাঙুরের এইচডিইউতে চারদিন রাখা হয়েছিল। তখন অবস্থা একটু জটিল ছিল। এইচডিইউ থেকে ওয়ার্ডে আনার পর কিন্তু অনেক ভালো ছিল স্ত্রী। ১৮ মার্চ তার প্রসব হবে বলে জানান ডাক্তাররা। সেদিন দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে স্ত্রীর গল্পগুজব হয়। স্ত্রী বলেন, তোমার জন্য দু’টি উপহার আসছে গো। কী চাই বলো তুমি, ছেলে না মেয়ে? আমি বলি, ভগবান যা দেবেন, তাই হাসিমুখে নেব। তোমরা সবাই সুস্থ থাকলেই আমি খুশি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ওঁকে স্যালাইন দেওয়া শুরু হয়। সাড়ে ১২টায় অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর দেখি, অপারেশন থিয়েটার থেকে অন্য রোগীরা সবাই বেরিয়ে আসছেন। স্ত্রী আসছে না। অনেকক্ষণ পর স্ত্রী বেরিয়ে এল। তখন ওর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, হাঁফাচ্ছে। আমায় বলল, আর বাঁচব না মনে হয়। শেষে মারাই গেল। দেখুন, একবারও কিন্তু বাঙুরের ডাক্তাররা বলেননি, স্ত্রীকে অন্য বড় হাসপাতালে নিয়ে যান। আমরা সামলাতে পারছি না। সব শেষ হয়ে গেল আমার।