কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
কলকাতা পুরসভার ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বিজয়গড়ে রয়েছে এই তিনতলা বাড়ি। এটি সম্পূর্ণভাবে ঘিরে রেখেছে ঝোপ-জঙ্গল। পলেস্তরা খসে পড়েছে। কোথাও ইট ভেঙেছে। বাড়িটিতে এখন পোকামাকড়, সাপের বাসা। এলাকার বাসিন্দারা বলেন, বাড়িটা যে কোনও দিন ভেঙে পড়বে। বর্ষায় এই বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে বেশ ভয় করে। আর ভেঙে পড়লে শুধু সেখানকার বাসিন্দাদেরই প্রাণ সংশয় নয়, যাবে আশপাশের অনেকেরই জীবন।
কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের নয়া আইন বলছে, সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রথমে বাড়িওয়ালাকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। তিনি রাজি না হলে ভাড়াটিয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হবে। কিন্তু তিনিও যদি রাজি না হন, তাহলে পুর আইন মেনে সেই বাড়ি কিছুদিনের জন্য অধিগ্রহণ করবে পুরসভা। এরপর কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে ওই বাড়ির সংস্কার করানো হবে। তারপর বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়াকে ১০০ শতাংশ ফ্লোর এরিয়া রেসিও অনুযায়ী অংশ দিয়ে বাকি অংশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিতে পারবে এবং তা বিক্রি করতে পারবে। তাহলে এই বাড়িটির ক্ষেত্রে তা করছেন না কেন বাড়িওয়ালারা? বাড়ির মালিক বিশ্বজিৎ মজুমদারের কথায়, আমরা চাই নয়া আইনানুযায়ী, আমাদের বাড়ির সংস্কার হোক। আমরা ভাড়াটিয়াকে বারবার বলছি, বাড়িটির অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ হয়ে রয়েছে। তাঁরা যেন উঠে যান। প্রয়োজনে তাঁদের কথাও ভাবা হবে। কিন্তু ভাড়াটিয়ারা সেই কথা শুনতে নারাজ। বিষয়টি নিয়ে আমরা কলকাতা পুলিস, মেয়র, পুর প্রশাসনের বিল্ডিং বিভাগ সব জায়গাতেই চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তেমন সাহায্য কোথাও থেকে মেলেনি। এখন চিন্তায় রীতিমতো আমাদের ঘুম ছুটে গিয়েছে।
বাড়িটিতে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন অংশ থেকে রড বেরিয়ে ঝুলছে। বাড়িটি ভেঙে পড়ার ভয়ে মালিক বিশ্বজিৎ মজুমদার তাঁর পরিবারকে নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তাঁর কথায়, শুধু রাতের বেলায় বাড়ি পাহারা দিতে আসি। তাঁর স্ত্রী সুলগ্না মজুমদার বলেন, আমাদের এই তিনতলা বাড়ির প্রত্যেকটি তলাতেই ছ’টি করে ঘর রয়েছে। দোতলা এবং তিনতলায় আমাদের ঘরগুলি তালাবন্ধ রয়েছে। নীচের তলায় ছ’টি ঘরের মধ্যে দু’টি ঘরে দীর্ঘদিন ধরেই ভাড়াটিয়া রয়েছে। তিনিই বললেন, নারায়ণচন্দ্র ঘোষ ও কৃষ্ণচন্দ্র পাল নিজেদের পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। সেই ভাড়াটিয়ারা বারবার দাবি করেছেন, গত চার-পাঁচ দশক ধরে রেন্ট কন্ট্রোলে ভাড়া দিচ্ছেন। যদিও তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্বজিৎবাবু। সুলগ্নাদেবী বলেন, ২০১৪ সালে বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে পড়ে। তখনই ভাড়াটিয়ারা পুলিসে অভিযোগ করেন। আমি বাড়ির ভগ্নদশা পরীক্ষা করার জন্য পুরসভায় চিঠি দিই। এরপরে ‘বিপজ্জনক বাড়ি’র বোর্ড লাগানো হয়। বৃষ্টি হলেই বড় বড় চাঙড় ভেঙে পড়ছে। গাছপালা গজিয়ে উঠে বাড়ির ভিতও দুর্বল করে দিয়েছে। এমতাবস্থায় রীতিমতো জোর করে বসে রয়েছেন ভাড়াটিয়ারা, দাবি সুলগ্নাদেবী-বিশ্বজিৎবাবুদের। যদিও কৃষ্ণচন্দ্রের মেয়ে লক্ষ্মী বলেন, বাড়ি ছেড়ে যাব কোথায়? আমাদের আর্থিক সংস্থান নেই। প্রায় তিন দশক এই বাড়িতে রয়েছি। তাই অন্য কোথাও যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই।