বিদ্যার জন্য স্থান পরিবর্তন হতে পারে। গবেষণামূলক কাজে সাফল্য আসবে। কর্মপ্রার্থীরা কোনও শুভ সংবাদ পেতে ... বিশদ
চুঁচুড়ার নারকেল বাগানের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণীর এই ছাত্র জানায়, সেফটি অ্যান্ড অ্যালার্ট নামে তার এই প্রকল্পটিতে একটি পালস অক্সিমিটার, একটি সার্ভো মোটর, একটি মাইক্রো কন্ট্রোলার ও একটি সিম ৯০০ মডিউল ব্যবহার করা হয়েছে। অভিজ্ঞান জানায়, সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের কাজকর্ম করার সময় রক্তে অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণ ৯৫ থেকে ১০০ থাকে। কোনও কারণে মানুষ ঘুমিয়ে পড়লে বা হার্ট অ্যাটাক হলে অক্সিজেন সরবরাহের পরিমাণ ৮০-র নীচে নেমে যায়। এই বিষয়টিকেই মূল প্যারামিটার করে এই প্রকল্পটির কাজ করেছি। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ট্রেনের চালকের হাতের আঙুলে একটি অক্সি পালস মিটার আংটির মতো লাগানো থাকবে। যার রিডিং তার বা ওয়্যারলেস সিস্টেমের মাধ্যমে একটি মাইক্রো কন্ট্রোলারে যাবে। মাইক্রো কন্ট্রোলারটির সঙ্গে একটি সিম ৯০০ ও একটি ব্রেকের সঙ্গে সংযোগ করে একটি সার্ভে মোটর যুক্ত করা থাকছে। মাইক্রো কন্ট্রোলারটিতে আমরা দুটি প্রোগ্রামিং ঠিক করে দিয়েছি। প্রথমত অক্সি পালস রেট রিডিং ৮০-র নীচে নামলে মোটর অটোমেটিক চলতে শুরু করবে যার ফলে ট্রেনটি থেমে যাবে।
এছাড়া সিম ৯০০ আগে থেকে সেট করে দেওয়া কন্ট্রোল রুমের নির্দিষ্ট নম্বরে এসএমএস বা ভয়েস এসএমএস পাঠিয়ে দেবে। পরীক্ষামূলকভাবে বোঝানোর জন্য আমরা এখানে একটি কি বোর্ড ব্যবহার করেছি। হঠাৎ করে কেন এই ভাবনা সেই প্রসঙ্গে অভিজ্ঞান জানায়, আমার বাবা অনিন্দ্যকিশোর দাস স্লিপ অ্যাকমিয়া নামক একটি রোগে আক্রান্ত। এই রোগীরা যখন তখন ঘুমিয়ে পড়ে। বাবা বছরখানেক আগে চিকিৎসার জন্য ভেলোরে গিয়েছিল। সেখান থেকে ট্রেনে বাড়ি ফেরার সময়েই বাবার সঙ্গে আলোচনার সময় এই বিষয়টি আমার মাথায় আসে। বাবা যদি অডিট অফিসার না হয়ে ট্রেনের চালক হত তাহলে ট্রেন চালানোর সময় ঘুমিয়ে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটে যেত। একই ভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে চালক ঘুমিয়ে গেলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লেও ট্রেন দুর্ঘটনার মুখে পড়তে পারে। তারপরেই স্কুলের বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে এই বিষয়টিকে সামনে রেখে কীভাবে রেল সুরক্ষা বজায় রাখা যায় তা নিয়ে চিন্তাধারা শুরু করি। বাবা, মা ও বন্ধু অর্কদীপের সহায়তায় বাড়িতেই পুরো বিষয়টি পরীক্ষামূলকভাবে করে দেখি। তারপর স্কুলের প্রদর্শনীতে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
অভিজ্ঞানের বাবা ভারতীয় অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট অডিট অফিসার অনিন্দ্যকিশোর দাস বলেন, ছোট থেকেই ছেলের নতুন নতুন জিনিস তৈরির নেশা রয়েছে। গত বছরও স্কুলের বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে চতুর্থ হয়েছিল। তাই এবারও নতুন কিছু একটা করতে হবে এই ভাবনা ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপরেই বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি জিনিস ব্যবহার করে ছেলের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরাও ওকে সাহায্য করেছি।
স্কুলের বিজ্ঞান প্রদর্শনীর দায়িত্বে থাকা পদার্থ বিদ্যার শিক্ষক সোমশুভ্র নন্দী বলেন, অভিজ্ঞানের এই প্রোজেক্ট আমাদের চমকে দিয়েছে। এইটুকু ছাত্রের এই ধরনের চিন্তাভাবনায় আমরা গর্বিত। আমরাও চাই রেল দপ্তর আমাদের ছাত্রের এই ভাবনাকে কাজে লাগাক।