পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
এই হাজার দশেক বইয়ের সঙ্গে শীঘ্রই আবার যুক্ত হচ্ছে আরও এক লক্ষ টাকার বই। আলমারি সমেত। শনিবার বইমেলায় ‘বই কিনুন, লাইব্রেরি জিতুন’ লটারিতে ভাগ্যবান বিজেতা হলেন নাকতলার এই বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার তড়িৎবাবুই।
একে শনিবার, তায় সরস্বতী পুজোর দিন—সন্ধ্যার অনেক আগেই বইমেলায় ছিল জমাট ভিড়। তারই মধ্যে গিল্ড অফিসের সামনে কথা হচ্ছিল তড়িৎবাবুর সঙ্গে। পাশে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিলেন স্ত্রী সংঘমিত্রাদেবী।
তাঁর দিকে তাকিয়ে হাল্কা অনুযোগের ভঙ্গিতে বৃদ্ধ বললেন, সারাজীবন আমার বইয়ের নেশাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন ও। শেষ ছ’মাস বাদে। এই ছ’ মাস আমি কোনও বই-ই কিনিনি! কিন্তু, কেন? উত্তর এল, এই যে ওর জন্য। সংঘমিত্রাদেবী আর কথা বলতে দিলেন না স্বামীকে। হাসতে হাসতে বললেন, আর বই রাখব কোথায়? বাড়ির কোথাও বই রাখার জায়গা বাকি নেই। শেষে এইবার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম! তাই হয়তো একটু ভয় পেয়ে ছ’মাস বই কেনা বন্ধ রাখে। কিন্তু, ও এই পুরস্কার পাওয়ায় আমি খুব খুশি। মুখে যাই বলি না কেন, বই যে আমারও প্রাণ, জানালেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা।
কথায় কথায় উঠে এল বহুদিন আগে বছর ষোলোর মেয়েকে নিয়ে বইমেলায় আসার কথা এবং তার জমানো কয়েন দিয়ে বই কেনার গল্প। যাওয়ার আগে বারবার একটা কথাই বললেন তড়িৎবাবু। মনে রাখবেন, বই আপনাকে কোনওদিন ঠকাবে না। সমস্ত বিপদে বইয়ের মতো বন্ধু পাবেন না। সারাজীবন প্রাণবন্ত রাখতে বইয়ের বিকল্প আর কী-ই বা আছে।
বইমেলায় দেখা গেল, বিরাট অংশের মানুষের হাতে ঘুরছে বইয়ের ব্যাগ। নামীদামি প্রকাশনা সংস্থাগুলির সামনে লম্বা লাইন। ভিড় অনামী বহু প্রকাশনার স্টলেও। গেট নম্বর সাতের কাছে সেন্টুর কার্টুনের স্টলের সামনে ব্যাপক ভিড়। বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ‘গানে মোর কোন ইন্দ্রধনু’। বইটি অনুলিখন করেছেন সাংবাদিক সুমন গুপ্ত।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড এখনও বইমেলার ভিড় এবং কেনাকাটার হিসেবে কষেনি। তবে বিক্রির নিরিখে এবারের বইমেলা গত বছরকে ছাপিয়ে যাবে বলেই আশাবাদী গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। বললেন, যতটুকু বুঝছি, ‘বইপ্রেমী’ মানুষের ভিড় এবারের মেলায় অনেক বেশি। আজকালের মধ্যেই বোঝা যাবে, আমাদের অনুমান কতটা সঠিক।
তবে এদিনের বইমেলার প্রিয় রং ছিল নিঃসন্দেহে বাসন্তী! সরস্বতী পুজো দিনটিকে বাঙালি অনেকদিন আগেই ‘ভ্যালেন্টাইন’ দিবস বানিয়ে ফেলেছে। সেই ছোঁয়াও দেখা গেল মেলায়। ভিড়ের অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশই ব্যস্ত ছিল প্রেম, হাতের ছোঁয়া মেখে একসঙ্গে হাঁটা, সেলফি, অনভ্যস্ত হাতে শাড়ি পরে গরবিনীর মতো ঘোরা, আর দলবেঁধে ‘গ্রুপ ফটো’ তুলতে! বছর কয়েক হল তুমুল জনপ্রিয় হলেও, এখনও সেলফি ম্যানিয়ায় আক্রান্ত মেলার ভিড়। ‘জাগো বাংলা’র মণ্ডপের সামনে সেলফি, ‘পশ্চিমবঙ্গ’র স্টলের সামনে বাউল গায়কদের সঙ্গে সেলফি, ‘লটারিতে লাইব্রেরি’র সামনে সেলফি, ধোঁয়া ওঠা চায়ের সঙ্গে সেলফি—কিছুতে সেলফি বাদ পড়েনি!
বইপ্রেমীদের অনেকেই এই মেলা আর মিলনমেলার সেই বইমেলার তুলনা টানলেও উদ্যোগ-আয়োজন, ভিড়ের সুবিধা-অসুবিধা মেটানোর দিক থেকে যথেষ্ট গোছানো এবারের মেলা। কিছু ক্ষেত্রে ব্যারিকেডের বাড়াবাড়ি ছাড়া বিধাননগর কমিশনারেটও ভিড় সামলেছে ভালোই। মেলায় জল, বাথরুম, স্টল নম্বর বোঝানোর ব্যবস্থাও ভালো। মেলা ফেরত মানুষের জন্য কোন বাস, কোথা থেকে পাবেন, সেই ঘোষণাও হচ্ছে বারবার। তারপরও কি সব মানুষ সব স্টল খুঁজে পান? পান না। আর এই না পাওয়াতেই যে অনেক বেশি আনন্দ বইমেলায়। বছরভর ব্যস্ততার মধ্যে বইমেলার একটুকরো পৃথিবীতে সঙ্গী-সঙ্গিনী, পরিবারের সঙ্গে ভিড়ে মিশেও আলাদা হয়ে থাকার আনন্দ, একসঙ্গে প্রিয় লেখক, প্রিয় কবির বইয়ের পাতা উল্টোনোর আনন্দ—সে আর অন্য কোথায়! আছে যে শুধু বইমেলাতেই।